আজকের দিন তারিখ ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, দুই শ্যালককে নদীতে ফেলে দিলেন দুলাভাই

স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, দুই শ্যালককে নদীতে ফেলে দিলেন দুলাভাই


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ৯, ২০২০ , ১২:৫৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


বরগুনা প্রতিনিধি : দাম্পত্য কলহের জের ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে দুই শিশু শ্যালককে নদীতে নিক্ষেপ করেছেন দুলাভাই। এতে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মৃত্যু হয়েছে সাত বছর বয়সী অপর আরেক শিশুর। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দুলাভাই মোসলেম আলী (২৪) শ্যালকদের হত্যা চেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন। জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে খরস্রতা বিষখালীর নদীর সঙ্গে যুক্ত একটি জলাশয়ে প্রথমে সাত বছরের শিশু আবদুল্লাহকে নিক্ষেপ করেন তাদের দুলাভাই মোসলেম (৩০)। এতে শিশু আবদুল্লাহর মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেন তিনি। এরপর ১৮ মাস বয়সী অপর শিশু আফসানকে জলাশয়ে নিক্ষেপ করার সময় আবদুর রহীম নামের স্থানীয় একজন ঘটনাটি দেখে ফেলেন। পরে আবদুর রহিমের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা হয় শিশু আফসানকে। তবে শিশু আবদুল্লাহর মৃতদেহ বহু খোঁজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি। আবদুল্লাহ এবং আফসান আপন দুই ভাই। ঢলুয়া ইউনিয়নের রায়ভোগ গ্রামের ছগির মিয়ার (৪০) তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে শিশু আবদুল্লাহ ও আফসান সবার ছোট। মোসলেম শিশু আবদুল্লাহ ও আফসানের বড় বোন ছবি বেগমের স্বামী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রহিম জানান, ডালভাঙা এলাকার নদীসংলগ্ন একটি দীঘিতে শিশু আফসানকে চুবিয়ে হত্যার চেষ্টা করছিল মোসলেম। বিষয়টি দেখে তিনি দ্রুত সেখানে গিয়ে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পরে স্থানীয়রা মোসলেমকে ধরে পুলিশে খবর দেয়। নিখোঁজ শিশু আফসানের পিতা ছগির মিয়া জানায়, ঘাতক মোসলেমের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। রাজধানী ঢাকায় থাকার সুবাদে সেখানে পরিচয় হওয়ার পরে তার মেয়ে ছবি (২০) বেগমের সাথে মোসলেমের বিয়ে হয়। মোসলেম রাজধানী ঢাকার একজন রিকশা শ্রমিক। তিনি নেশাগ্রস্ত হওয়ায় বিয়ের পর থেকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। মোসলেম তার স্ত্রী সন্তানের ভরণপোষণও ঠিকমত নির্বাহ করতেন না। তাই মাসখানেক আগে শিশুপুত্র নিয়ে পিতার বাড়ি বরগুনার রায়ভোগ গ্রামে চলে আসেন ছবি বেগম। সম্প্রতি ছবি বেগম তার ছোট ভাইবোন এবং একমাত্র শিশুপুত্র নিয়ে তাদের নানাবাড়ি ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙ্গা গ্রামে বেড়াতে যান। তিনদিন আগে ঢাকা থেকে স্ত্রী পুত্রকে নিতে বরগুনায় আসেন মোসলেম। এ সময় স্ত্রী ছবি বেগম তার সঙ্গে যেতে রাজি না হলে মোসলেম তার শিশুপুত্রকে নিয়ে যেতে চান। স্ত্রী ছবি বেগম এবং শ^শুর ছগির মিয়া মোসলেমের কাছে তার শিশুপুত্রকে দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী ছবি বেগমের আপন ছোট দুই ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে নদীতে নিক্ষেপ করেন মোসলেম। প্রথমে সাত বছরের শিশু আবদুল্লাহকে জলাশয়ে নিক্ষেপ করে হত্যার পর তার মৃতদেহ বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেন। এরপর অপর সহোদর ১৮ মাস বয়সী শিশু আফসানকে পানিতে নিক্ষেপ করলে আবদুর রহিম নামের স্থানীয় একজন তা দেখে ফেলেন। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ঘাতক মোসলেমকে আটক করে রাখে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক মোসলেম পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছে এমন তথ্য দিয়েছেন। স্থানীয়দের কাছ থেকে উদ্ধার করে মোসলেমকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। পরে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ বিষয়ে ঢলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল টিটু জানান, সন্ধ্যার পরে তিনি বিষয়টি জানতে পেরে বরগুনা থানার ওসিকে অবহিত করেন। রাত ৯ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জনতার হাতে আটক মোসলেমকে থানায় নিয়ে যায়। বরগুনা সদর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, নিহত শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ঘাতক মোসলেমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযুক্ত মোসলেম শিশু শ্যালক আবদুল্লাহকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে এসেছিলাম, কিন্তু আমার স্ত্রী ও শ্বশুড় নিয়ে যেতে দেয়নি। এ কারণে ক্ষুদ্ধ হয়ে আমি শ্যালক আবদুল্লাহ ও আফসানকে হত্যার পরিকল্পনা করে বেড়াতে নিয়ে যাই। এরপর প্রথমে আবদুল্লাহকে দীঘিতে ফেলে ডুবিয়ে হত্যা করে লাশ বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেই। এরপর আফসানকেও একই প্রক্রিয়ায় হত্যার চেষ্টা করি।