আজকের দিন তারিখ ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য লকডাউনে বাউফলে সবজি চাষে কৃষকের মুখে হাসি

লকডাউনে বাউফলে সবজি চাষে কৃষকের মুখে হাসি


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৮, ২০২০ , ৯:১১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


বাউফল থেকে এমএ বশার : সবজিতে হাসি ফুটেছে উপকূলীয় পটুয়াখালীর বাউফলের শতাধিক কৃষক-কৃষাণীর মুখে। করোনা পরিস্থিতির লকডাউনে বীজ, সার, হরমোনসহ ওষুধ সরবরাহকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর যখন বন্দিদশা তখন সাধ্যানুযায়ি নিজস্ব পদ্ধতিতে ধরে রাখা বীজ আর প্রাকৃতিক চাষবাস পদ্ধতিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক-কৃষাণী। পরিবহন সমস্যার কারণে যশোহর, রাজশাহীসহ দেশের উত্তরের জেলাগুলো থেকে সরবরাহ কমে যাওয়া, স্থানীয় হাট-বাজরে চাহিদা বৃদ্ধি আর দাম ভাল পাওয়ায় সাবলম্বী হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে অনেকেরই। তবে সাম্প্রতিক ঘূনিঝড় আম্ফানে সবজি ক্ষেতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। যা কাটিয়ে উঠতে তেমন বেগ পেতে হবে না একটাই জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।  চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা জানান, লকডাউনের এ সময় সবজি চাষে লাভের মুখ দেখছেন উপজেলার শতাধিক সমন্বিত সবজী চাষি। একই সঙ্গে চাহিদা আর দাম ভাল পাওয়ায় ঘরের আঙিনায় ও বাড়ির আশপাশের পরিত্যাক্ত জমিতেও সবজি চাষে এগিয়ে এসেছেন নারীরা। লাভের মুখ দেখে এদের কেউ কেউ পরিবারের বাড়তি আয়ে হচ্ছেন স্বাবলম্বীও। করোনার মতো মহামারির বিপর্যয় কালে কৃষক-কৃষাণীর সবজি চাষের এই আগ্রহ সৃষ্টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সুলতানাবাদ গ্রামের কৃষক কালাম হাওলাদার জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসির) ভূ-উপরিস্থ পানির সাহায্যে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় ৩.৫ কিলোমিটার সুলতানাবাদ-ধানদী খাল (শশিতলার খাল) ও শাখা খাল পূণ: খনন করায় ওই খাল পাড়ে পরিবারের প্রয়োজনেই চিচিঙ্গা, ধুন্দল আর করোলার চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু পরিমানে বেশি লাগানো আর বাম্পার ফলনে পরিবারের চাহিাদা মিটিয়ে প্রতিবেশি ও আত্মীয়-ম্বজনকে দেওয়ার পরেও নিয়মিত স্থানীয় হাট বাজারে চিচিংগা বিক্রি করছেন তিনি। এতে চাষ, সার-ওষুধ, মাচা তৈরীর খরচ মিটিয়েও ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হবে তার। তিনি আরো জানান, একই খালের দুই পাড়ে স্থানীয় বিভিন্ন কৃষক-কৃষাণীর পুইঁশাক, ঢেঁরস, কলমী শাক, ধুন্দল, ডাটাশাক, পাটশাক, মিষ্টিকুমড়া, জালি, লাফা, বেগুনসহ নানা জাতের সবজীর নজরকাড়া ফলন এসেছে। নাব্যতা হারিয়ে খালের ভরাট হওয়া বাকি অংশের খননের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে তিনি বলেন, ‘আংশিক খননের কারণে খালে পুরোদমে পানির প্রবাহিত না হলেও দু’পাশে মাটি তোলায় কৃষকরা এই করোনা কালে দৃষ্টিনন্দন সবজির আবাদ করতে পারছেন। সবজির বাজার দর দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবজি চাষি মাহবুব দেওয়ান ও রহিম মৃধা জানান, সমন্বিত সবিজি চাষে ভাগ্য ফিরেছে অনেকের। সিডর-আইলার পর কয়েক বছর থমকে দাঁড়ালেও বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সমন্বিত মৎস্য ও সবজি চাষে খামারিদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর  পতিত জায়গা ফেলে না রেখে গ্রামের সাধারণ মানুষও সবজি চাষে ঝুকে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান  নিজেদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই এ সময় চাষিরা পরস্পর পরস্পরকে বীজ ধার দিতেও দেখা গেছে। ধানদী গ্রামের লক্ষ্মন শীল, হেন্দিপুরের প্রভাষক ফরিদুর রহমান, হোসেন মাস্টার, মমিনপুরের কাদের ডাক্তার, সুলতানাবাদের জাকির দেওয়ান, নাজিরপুরের আবু মিয়া, মদনপুরের জাকির, রামনগরের হানিফ মাওলানা, কালাইয়ার গিয়াস উদ্দিন, খাজুরবাড়িয়ার রীপন মিয়া, দাসপাড়ার রীপন, মজিবর মৃধাসহ শতাধিক চাষির খামারে বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ডাটা, জালিসহ নজরকাড়া গ্রীষ্মকালিন নানা শাক-সবজি শোভা পাচ্ছে এখন। নিজস্ব পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহ ও চারা তৈরীর মতো কৌশল আয়ত্ব করে মৌসুমের শুরুতে বীজ ও চারা বিক্রি থেকে অর্ধলক্ষাধিক আয় করা মমিনপুর গ্রামের সবজি চাষি কাদের ডাক্তার বলেন, ‘সবজি চাষের আয় দিয়া পোলা-মাইয়া, নাতি-নাতকুর লইয়া সোংসার চলে এ্যাহন। কোম্পানীগুলা নিজেগো স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। সার-বিষ বেইচ্চা লাখ লাখ টাহা আতাইয়া নেওনের লইগ্যা আমাগো কাছে হাইব্রিড বীজ লইয়া আয়। যা থাকইক্কা পরের বছর আর বীজ পাওন যায় না। নিজেগো নিওমে বীজ ধইর‌্যা না রাখতে পারলে এই করোনা মড়কের সোময় বীজ কই পাইতাম। কেডা দিতে। ক্যামনে করতাম শাক-সবজি চাষ।’ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ৭৫ হেক্টর ডাটা, ৮০ হেক্টর ঢেরস, ৬০ হেক্টর পুঁইশাক, ৭০ হেক্টর কলমী শাক, ৪০ হেক্টর মিষ্টি কুঁমড়া, ৫০ হেক্টর শশা ছাড়াও বরবটি, করলাসহ বিভিন্ন জাতের মোট ৭৫০ হেক্টরে এ বছর গ্রীষ্মকালিন শাকসবজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মচারি আর কয়েক জন শুভানুধ্যায়ীর অর্থায়নে করোনা পরিস্থিতির লকডাউনের এই সময়ে বিভিন্ন এলাকার ১৫শ’ কৃষক-কৃষাণীর মাঝে কৃষি গভেষণার উন্নত মানের সীম, লাউ, ডাটাসহ কলমী, লাফা, করলার মতো কয়েক ধরণের গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির বীজ বিতরণ অব্যহত রয়েছে। চাষিরা নিজস্ব পদ্ধতিতে ধরে রাখা নিজেদের বীজও ব্যাবহার করছেন। এ সময়ে এটা খুবই ইতিবাচক। অগ্রসরমান ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ কোন ধরণের ঝড়-ঝঞ্ঝা আঘাত না হানলে কৃষকরা সবজি চাষে লাভবান হবেন। শাক-সবজির চাষবাস জনপ্রিয় হওয়ায় এ বছরই উপজেলায় সবজি ঘাটতি শতকরা ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে আসবে।’