আজকের দিন তারিখ ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় খাদ্যগুদামের সংকট : কৃষক যেন কোনোভাবেই বঞ্চিত না হন

খাদ্যগুদামের সংকট : কৃষক যেন কোনোভাবেই বঞ্চিত না হন


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ১৫, ২০২০ , ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


করোনা-পরবর্তী বিশ্বে খাদ্য পরিস্থিতি কী হতে পারে এ নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনেকের ধারণা। আমাদের দেশও এই শঙ্কার বাইরে নয়। ইতোমধ্যে অধিকাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকি ধান কাটার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। জানা যায়, করোনা সংকট মাথায় রেখে চলতি বছরে প্রায় ২১ লাখ টন খাদ্য সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। একইসঙ্গে চলতি বোরো মৌসুমে আগের বছরের তুলনায় বেশি চাল, ধান, আতপ ও গম সংগ্রহ করবে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গুদামে ধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায় হুমকির মুখে পড়তে পারে সরকারের খাদ্য সংগ্রহ। খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান-গম সংগ্রহ শুরু করেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত গুদাম না থাকায় তা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল ভোরের কাগজে এই সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। খাদ্যগুদামের সংকটের কারণে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ার খবরটি উদ্বেগজনক। ধান উৎপাদন হয়, এমন এলাকাগুলোতে বেশি করে গুদাম থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই। আবার দেখা যায়, গুদাম থাকলেও সেগুলো নানা কারণে বন্ধ রয়েছে। আবার অনেক খাদ্যগুদাম এতটাই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে যে সেগুলোতে খাদ্য রাখাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে কৃষকরা প্রায়ই ক্ষতির মুখে পড়েন। অন্যদিকে রয়েছে ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। আমাদের দেশে ধানচাষিদের বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। তারা ধারদেনা করে ফসল ফলান। এমতাবস্থায় কৃষক যখন ন্যায্য দাম পান না তখন তাদের অনেকেই চেষ্টা করেন সরকারি গুদামে ধান দিতে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই তা পারেন না। প্রকৃত কৃষকের পরিবর্তে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল ফড়িয়ারা সুবিধা নিতে তৎপর হয়। সহজ-সরল কৃষক তাদের সঙ্গে পেরে উঠেন না। বছরের পর বছর তাই হয়ে আসছে। বিশেষ করে সরকারের কাছে ধান বিক্রির তালিকায় নাম থাকা সত্তে¡ও অনেক কৃষক সেটি জানেনই না। যেসব কৃষকের নাম সরকারের কাছে ধান বিক্রির তালিকায় রয়েছে তাদের সে বিষয়ে জানাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নিতে হবে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে দেশে প্রচলিত সরকারি খাদ্য সংগ্রহ ও বিপণন নীতিমালা ত্রূটিপূর্ণ। যে কারণে এক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অনুপ্রবেশ ঘটে। আর এর ব্যাপক সুযোগ নিয়েছে ফড়িয়া, মধ্যস্বত্বভোগী, চাতাল ও মিল মালিকরা। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে একশ্রেণির দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ধানের ফলন ভালো হলেই কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে না। কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে হলে ধানের ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করতে হবে।