আজকের দিন তারিখ ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ ভালো দাম পাবার আশা পঞ্চগড়ের ‘বস’ আর ‘বিগ বস’র মালিকের

ভালো দাম পাবার আশা পঞ্চগড়ের ‘বস’ আর ‘বিগ বস’র মালিকের


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১, ২০২১ , ১২:৫০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


পঞ্চগড় প্রতিনিধি : আর কয়েক সপ্তাহ পরই কোরবানির ঈদ। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই গরু বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন পঞ্চগড়ের খামারিরা। তবে ক্রেতা ও ন্যায্যমূল্য পাবেন কিনা এমন শঙ্কার মধ্যে আছেন তারা। খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে খামারিরা কোরবানির পশু বিক্রি করতে লালন-পালন অব্যাহত রেখেছেন। এরই মধ্যে পঞ্চগড়ে সবার নজর কেড়েছে ‘বস’ আর ‘বিগ বস’ নামে দুটি গরু। আদর করে ‘বস’ আর ‘বিগ বস’ নাম দিয়েছেন দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের হাজরাডাঙ্গা উনিশ ঘর এলাকার দরিদ্র কৃষক বাবুল হোসেন। তার গরু দুটি নিয়ে জেলায় সর্বত্র চলছে আলোচনা। ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় দুটির মধ্যে ‘বসের’ বয়স তিন বছর। ওজন ১৪ মণ। উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি ও লম্বায় ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। ‘বিগ বসের’ বয়স চার বছর। ওজন ২০ মণ। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও লম্বায় ৮ ফুট।
অভাবের সংসারে টানাপোড়েন সত্ত্বেও খেয়ে না গরু দুটিকে ছোট থেকে প্রাকৃৃতিক উপায়ে বড় করে তুলেছেন কৃষক বাবুল হোসেন। বাবুল হোসেন বলেন, ভালো দামে গরু দুটি বিক্রি করতে ৩-৪ বছর ধরে সন্তানের মতো লালন-পালন করছি। স্ত্রী বুলবুলি বেগম সবসময় গরু দুটিকে চোখে চোখে রাখে। বসের দাম সাত লাখ টাকা এবং বিগ বসের দাম ১০ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, প্রতিদিন গরু দুটি দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন ক্রেতা, বিক্রেতাসহ স্থানীয়রা। গরু ব্যবসায়ীরা এলেও কাঙ্ক্ষিত দাম বলেননি। দাম মনমতো না হলে গরু বিক্রি করবো না।
বাবুল আরও বলেন, ষাঁড় আমার বাড়ির গরু থেকেই হয়েছে। ছোট থেকেই প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার খাইয়ে বড় করে তুলেছি। অভাবের সংসার; তাই ধারদেনা করে হলেও গরু দুটির খাবার জোগান দিই। আদরের গরু বিক্রি ভাঙা ঘরটা ঠিক করবো।
বাবুল বলেন, প্রতিদিন গরু দুটিকে কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি ভুষি, চাপর, খৈল, ছোলা, রান্না করা খুদ, কখনও আপেল ও মালটা খাওয়াই। গরু দুটির খাবারের পেছনে দৈনিক দুই হাজার টাকা ব্যয় হয়। বাবুলের স্ত্রী বুলবুলি বেগম বলেন, গরু দুটি নিয়েই আমাদের সারাদিন কাটে। আমরা দুজনে সামাল দিতে পারি না। তাই আরও দুজন শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন গরুগুলোর যত্ন নিই। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক দানেশ আলী ও স্থানীয় উদ্যোক্তা আব্দুল মজিদ জানান, ওই দরিদ্র পরিবারটি গরুগুলোকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করছে। এর আগে আমরা এত বড় গরু দেখিনি। সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র বলেন, আমাদের এলাকায় কয়েকটি গরুর খামার রয়েছে। কিন্তু বাবুলের গরু দুটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি অনেক বড়। দেশীয় খাবার খাইয়ে গরুগুলো মোটাতাজা করেছেন তারা। কোরবানির বাজারে ভালো দাম পেলে তাদের স্বপ্নপূরণ হবে। পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ওই গরুগুলোর চেয়ে বড় গরু জেলায় আছে বলে আমার জানা নেই।
করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির গরুর বাজার কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাটবাজারগুলোতে ভালোই গরু উঠছে। বাইরেও গরু যাচ্ছে। দামও ভালো। গণপরিবহন কিংবা কোরবানির পশু পরিবহন বন্ধ না থাকলে দাম ভালোই পাবেন খামারিরা। এরপরও খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক থাকবে। তবে পরিবহন চালু থাকলে খুব প্রভাব পড়বে না। সামনে পরিবেশ পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার ওপর নির্ভর করবে গরুর দাম।
তিনি আরও বলেন, পঞ্চগড়ে প্রায় আট হাজার তালিকাভুক্ত খামারি রয়েছেন। কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সৌখিন পরিবারসহ এসব খামারির প্রায় ৭০ হাজারের বেশি পশু রয়েছে। জেলায় কোরবানির জন্য ৪০-৪৫ হাজার পশুর প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত পশু বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।