আজকের দিন তারিখ ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাবিশ্ব ‘ভাইয়া’ বিতর্কে সরগরম ভারতের রাজনীতি

‘ভাইয়া’ বিতর্কে সরগরম ভারতের রাজনীতি


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২ , ৩:৩০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব


দিনের শেষে ডেস্ক :  ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা চরণজিৎ সিং চান্নি গত বুধবার ঘোষণা দেন, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লির ‘ভাইয়া’-রা পাঞ্জাব শাসন করতে চাইলে এখানকার মানুষ সেটা হতে দেবে না। এসব ‘ভাইয়া’দের পাঞ্জাবে গেড়ে বসতেই দেয়া হবে না! তার এ বক্তব্য ভারতজুড়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। পরদিন বৃহস্পতিবারও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী কথিত ‘ভাইয়া’দের আক্রমণ করে নানা বক্তব্য দেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি ব্যাখ্যা দেন- বিহার, উত্তরপ্রদেশ বা দিল্লির সাধারণ মানুষকে পাঞ্জাব থেকে বের করে দেয়ার কথা আদৌ তিনি বলেননি।

‘ভাইয়া’-রা আম জনতা নন, তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে পাঞ্জাবে ভোট করতে আসা দুর্গেশ পাঠক, সঞ্জয় সিং, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো নেতারা। নির্বাচনের মুখে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বক্তব্য বিকৃত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন চান্নি। কাল যখন এ মন্তব্য করেন, চান্নির পাশে ছিলেন দিল্লি থেকে প্রচারে আসা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি হাসি মুখে হাততালি দিয়ে সমর্থন করেছেন চান্নিকে। চান্নি তখন বলেন, ‘প্রিয়ঙ্কা ভাইয়াদের দলে পড়েন না। তিনি পাঞ্জাবের ‘বহু’ (বধূ), পাঞ্জাবিদেরও।’

শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকে মনে করেছেন, আসন্ন নির্বাচনে যাতে ‘গো-বলয় (উত্তরপ্রদেশ-বিহার)-এর দল’ বিজেপি ও দিল্লিতে ক্ষমতায় থাকা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আপ ওই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে না-পারে, সে জন্যই ‘ভাইয়া’ বলে পাঞ্জাবি জাত্যভিমান উসকে দিতে চেয়েছিলেন চান্নি। কিন্তু ভোটের মুখে বিপক্ষই বা তাকে ছাড়বে কেন! প্রচারে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন, আদতে উত্তরপ্রদেশ-বিহার-দিল্লির বাসিন্দাদেরই ‘অপমান’ করেছেন চান্নি, তাদের পাঞ্জাব থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।

আর সেই অপমানের কথা শুনে পাশে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছেন ‘দিল্লির একটি বিশেষ পরিবারের একজন’, যিনি চান্নির ‘মালিক’। অর্থাৎ, চান্নি নন ‘অপমান’-এর দায় আদতে প্রিয়াঙ্কার কাঁধেই চাপিয়ে মোদি ভোটে তার জবাব দিতে ডাক দিয়েছেন। সুপরিকল্পিতভাবেই ‘ভাইয়া’-র অর্থ আম জনতা বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন মোদি। তিনি বলেন, ‘গুরু গোবিন্দ সিংয়ের জন্মস্থান কোথায়? বিহারের পটনাসাহিব। আপনারা কি গুরু গোবিন্দ সিংকে পাঞ্জাব থেকে উৎখাত করবেন? যারা এসব কথা বলেন, তাদের এক লহমার জন্যও সুযোগ দেয়া উচিত নয়।’

কাল সন্ত রবিদাস জয়ন্তীতে এ দলিত গুরুর মন্দিরে গিয়ে কপাল ঠুকেছেন মোদি। তিনি বলেন, ‘সন্ত রবিদাসের জন্ম উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে। তাকেও পাঞ্জাব থেকে বের করে দেয়া হবে?’ চান্নির মন্তব্যকে ধরে মোদি এমন অভিযোগ করেন, বিজেপির জাতীয়তাবাদকে ঠেকাতে কংগ্রেস বিচ্ছিন্নতাবাদী ও প্রাদেশিকতার মনোভাবকে উসকে তুলছে।

মোদীর পাশাপাশি বিজেপির একঝাঁক নেতা এ দিন টুইটার-ফেসবুকে ঢালাও প্রচার করেন, উত্তর ভারতের অন্য তিন রাজ্যের বাসিন্দাদের পাঞ্জাব থেকে তাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন চান্নি। সুতরাং এমন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ও প্রাদেশিক’ লোক ও তার দলকে কিছুতেই পাঞ্জাবে জয়ী হয়ে সরকার গড়তে দেয়া যায় না।

আম আদমি পার্টির নেতা তথা চান্নি বর্ণিত অন্যতম ‘ভাইয়া’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালও এমন সুযোগ ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘কোনও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এমন অপমানজনক মন্তব্য করাটা খুবই নিন্দার। এদের লজ্জা হওয়া উচিত!’

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য অনভিপ্রেত। পাঞ্জাব গড়ার পেছনে বিহারের বাসিন্দাদের অবদান কম নয়। কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে এ ধরনের মন্তব্য করতে দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি।’