আজকের দিন তারিখ ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ নৌকায় জমজমাট ভাসমান পাটের হাট

নৌকায় জমজমাট ভাসমান পাটের হাট


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩ , ৩:৫৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


দিনের শেষে প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ পাটের গৌরব ও ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছেন গ্রামবাংলার কৃষক। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পাটের আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেননি। ফলে পাটের উৎপাদন এখনও বেশ। সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে যমুনা নদীতে নৌকায় জমে উঠেছে ভাসমান পাটের হাট তার যথার্থ উদাহরণ। নদী পথে ক্রেতা-বিক্রেতাদের যাতায়াত ও পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধার কারণে জমজমাট ভাসমান এই হাট। শনি ও বুধবার সপ্তাহের দুই দিন টলে এই হাটের কেনাবেচা। হাট ভোর থেকে চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। দূর-দূরান্ত থেকে নৌকায় আসা এই ভাসমান পাটের হাটে প্রকার ভেদে প্রতি মন পাট ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে ৫ হাজার ৬৪৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩৫০, উল্লাপাড়ায় ১ হাজার ৬২০, বেলকুচিতে ১ হাজার ৯৬০, শাহজাদপুরে ৪৩৫, তাড়াশে ৭৪৫, রায়গঞ্জে ৮৯২, চৌহালীতে ৯২০, কামারখন্দে ১ হাজার ৭৩১ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। জেলায় মোট ১৭ হাজার ২৯৮ হেক্টর জমি থেকে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২০৯ মেট্রিক টন। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়ায় শত বছর ধরে চলে আসছে নৌকায় ভাসমান পাটের হাট। পানির ওপরে একের পর এক সারি সারি নৌকায় পাটের কেনাবেচা হয় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আসা-যাওয়া ও বেচাকেনা সব কিছুই চলে ভাসমান নৌকায়। এ বাজার থেকে পাইকাররা পাট কিনে কারখানা মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। তবে এ বছর পাটের দাম কম হওয়ায় হতাশ চাষিরা। স্থানীয়রা জানান, শত বছরের ভাসমান এই হাটে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরসহ পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার ধুনট, শেরপুর, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর ও সারিয়াকান্দি থেকে পাট বিক্রেতা ও ক্রেতারা নৌকায় আসেন। যমুনার তীর থেকে ১০০ গজ দূরে নোঙর ফেলে অর্ধশতাধিক নৌকায় কেনাবেচা হচ্ছে পাট। নৌকাতেই হাঁকডাক ও নৌকাতেই বিক্রি চলে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাট কিনে অন্য নৌকায় উঠিয়ে নিয়ে যায় ব্যাপারীরা। তবে পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ প্রতি বছরই পাট চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকের। কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে যেমন সার, বীজ ও উৎপাদনের জিনিসের দাম বেশি, তেমনই বেড়েছে শ্রমিকের মূল্যও। তাই উৎপাদন খরচ বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ। প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন করতেই তাদের খরচ হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন হয় ৬ থেকে ৭ মণ পাট। এই পাট বিক্রি করতে যাতায়াত ভাড়া আছে। সবমিলিয়ে যে খরচ তা এই মূল্যে পাট বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না। ফলে হতাশ হচ্ছেন কৃষক। কিন্তু বড় বড় কৃষকেরা মূল্য বৃদ্ধির অপেক্ষায় এখন পাট বিক্রি না করলেও নিম্নবিত্তরা বাধ্য হয়েই বিক্রি করছেন। এ ছাড়াও সঠিক সময়ে খালবিলে বন্যার পানি না আসায় পাট জাগ দিতে সমস্যা হয়েছে অনেক কৃষকের। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন কমেছে, অন্যদিকে নষ্ট হয়েছে অনেক ফসল। ভাসমান হাটের পাটের ফড়িয়া ব্যবসায়ী আলসাম উদ্দিন বলেন, মিল মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণেই কৃষক পর্যায়ে কমছে পাটের দাম। নাটুয়ারপাড়ার কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এ বছর সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বাড়লেও পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। প্রতি মণ পাট উৎপাদন করতে আমাদের ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা খরচ হয়। আর বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-২৫০০ টাকায়। এ অবস্থায় কীভাবে পাট চাষ করতে আমরা আগ্রহী হবো। স্থানীয় আরেক পাট চাষি মকবুল মিয়া বলেন, বড় বড় মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে পাটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের উৎপাদিত পণ্য লাভের চেয়ে লোকসানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিচ্ছেন। পাটের পাইকার শাহ আলম বলেন, এ হাট থেকেই পাট কিনি। কারণ নৌকায় পাট নামানো ও তোলা অনেক সহজ হয়। প্রতি হাটে ৭০-৮০ মণ পাট কেনা হয়। নাটুয়ারপাড়া হাটের ইজারাদার রেফাজ উদ্দিন বলেন, দুর-দুরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা প্রয়োজনে এখানে থাকতেও পারবেন। আগস্ট থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এখানে পাটের হাট বসে। প্রতি হাটে ৭ থেকে ৯ হাজার মণ পাট বেচা-কেনা হয়। কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত জানান, ডাকাতি ঠেকাতে হাটের দিন যমুনায় পুলিশের বিশেষ টহল থাকে। আমরা যেকোনো ধরনের সেবা দিতে প্রস্তুত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, সিরাজগঞ্জে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৯১০ হেক্টর। সেখানে অর্জিত হয়েছে ১৭ হাজার ২৯৮ হেক্টর। আমরা বিঘাপ্রতি গড়ে প্রায় ৮ মণ করে ফলন পেয়েছি। কৃষকরা বাজারে প্রতি মণ পাটের দাম পাচ্ছেন প্রায় ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। পাশাপাশি তারা পাটকাঠি পাচ্ছে, যা ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন। তিনি বলেন, আমরা সাধারণত কৃষকদের আগাম জাতের পাটের চাষ করার জন্য অনুপ্রাণিত করছি। কৃষকেরা এর পরে আমন চাষ করতে পারে।