আজকের দিন তারিখ ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাবিশ্ব নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি গাজায়

নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি গাজায়


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ২৪, ২০২৩ , ৫:৪২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব


দিনের শেষে ডেস্ক : রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। বিকেলে নারী ও শিশুসহ ১৩জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। সেইসঙ্গে অবরুদ্ধ ও বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে আরও বেশি পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দেওয়া হবে।
গাজার উত্তরাঞ্চলের কাছে রয়টার্সের একজন সংবাদদাতা ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর কোনো তৎপরতা শুনতে পাননি এবং ফিলিস্তিনি রকেট উৎক্ষেপণের কোনো লক্ষণ দেখত পানননি।
লেবাননের আল-মায়াদিন টিভি জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় কোনো বোমা হামলার শব্দ শোনা যায়নি। তবে ইসরায়েলি বাহিনী ছিটমহলের ঘনবসতিপূর্ণ উত্তর অংশের বাসিন্দাদেরকে বাড়িতে ফিরে যেতে বাধা দিচ্ছে।
আল-জাজিরা বলেছে, একটি ঘটনায় সেনারা গুলি চালিয়েছে, তবে এতে হতাহতের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে তারা ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজা উপত্যকা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছিল। এলাকাটিকে ‘বিপজ্জনক যুদ্ধের অঞ্চল’ বলেও বর্ণনা করেছে তারা।
উপত্যকা থেকে ট্যাংকসহ কয়েক ডজন ইসরায়েলি সামরিক যানকে সরে যেতে দেখেছেন। সাঁজোয়া কলামে থাকা বেশ কয়েকজন সৈন্য বলেছেন, তাদের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ গাজা উপত্যকার বাইরে দুটি ইসরায়েলি গ্রামে সম্ভাব্য ফিলিস্তিনি রকেট হামলার আগাম সতর্কতা হিসেবে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়েছিল। ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে একটি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের রাস্তায় জনতার ভীড় ছিল। সেখান থেকে ফিলিস্তিনি নাগরিক খালেদ আবু আনজাহ রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো প্রতিরোধ করে আশাবাদী ও গর্বিত। শত ব্যথা সত্ত্বেও আমাদের অর্জনে আমরা আনন্দিত।’
হামাস শাসিত ছিটমহলের অভ্যন্তরে কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজা শহরের একটি হাসপাতাল বোমা হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিল। উভয় পক্ষই সতর্ক করেছে যুদ্ধবিরতি সাময়িক সময়ের জন্য হবে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালটিতে লাগাতার বোমা হামলা করা হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকার ছিল। হাসপাতালে শয্যাশায়ী বৃদ্ধ ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি ছিল যারা নিজে নিজে নড়াচড়া করতে পারে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির এল বার্শ আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, একজন রোগী ও একজন আহত মহিলা মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি দোহায় বলেছেন, গাজায় অতিরিক্ত সাহায্য পাঠানো হবে এবং বৃদ্ধ ও নারীসহ প্রথম ধাপে জিম্মিদের স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় মুক্ত করা হবে। চার দিনে মোট ৫০জনকে মুক্তি দেওয়া হবে।
রয়টার্স টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর মিসর থেকে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করছে। দুটি ট্রাক মিসরীয় সংস্থা থেকে এসেছে। এদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘মানবতার জন্য একতা’ ‘গাজার ভাইদের জন্য’।
মিসর বলেছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হলে প্রতিদিন গাজায় ১ লাখ ৩০ হাজার লিটার ডিজেল ও চার ট্রাক গ্যাস সরবরাহ করা হবে এবং প্রতিদিন ২০০ ট্রাক সাহায্য গাজায় প্রবেশ করবে।
কাতারি মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমরা সবাই আশা করি যে এই যুদ্ধবিরতি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার জন্য বৃহৎ পরিসরে কাজ করার রাস্তা তৈরি করে দেবে।
এদিকে, হামাস তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে সমস্ত শত্রুতা বন্ধ করার নিশ্চয়তা দিয়েছে। কিন্তু হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা পরে একটি ভিডিও বার্তায় ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ উল্লেখ করেছেন। তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরসহ সমস্ত প্রতিরোধ ফ্রন্টে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় সাত সপ্তাহ আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সহিংসতা কেবলই বেড়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীও বলেছে যে শীঘ্রই যুদ্ধ আবার শুরু হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি এক বিবৃতি অনুসারে বৃহস্পতিবার নৌ কমান্ডোদের একথা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি একটি সংক্ষিপ্ত বিরতি হবে, যার উপসংহারে যুদ্ধ, লড়াই দুর্দান্ত শক্তির সঙ্গে চলতে থাকবে। পাশাপাশি আরও জিম্মিদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করা হবে। কমপক্ষে দুই মাস যুদ্ধ চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ‘উত্তর গাজার নিয়ন্ত্রণ লম্বা সময় ধরে যুদ্ধ করার প্রথম ধাপ। আমরা পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ইসরায়েলের মতে, ৭ অক্টোবর হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ৪৮ দিন ধরে অবরুদ্ধ ছিটমহলে বোমা হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। এতে প্রায় ১৪ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছে। নিহতের মধ্যে ৪০ শতাংশই শিশু। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার হাজার হাজার মানুষ সহিসংতা থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। তবে পরিস্থিতি আরও মরিয়া হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বৃহস্পতিবার গাজা সফরের সময় ‘অকথ্য দুর্ভোগ’ দেখে বলেছেন, ‘মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং মানবতার প্রতি আশা হারিয়ে ফেলছে। তাদের অবকাশ দরকার, তারা রাতভর দুশ্চিন্তা না করে যেন ঘুমাতে পারে এমন পরিবেশ দরকার। প্রত্যেকের ন্যূনতম এতটুকু প্রাপ্য।’