আজকের দিন তারিখ ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য এবার রাজশাহীতে আমের দামে ধস

এবার রাজশাহীতে আমের দামে ধস


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৬, ২০২১ , ১২:২৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকের জীবন-জীবিকার অন্যতম অবলম্বন আমনির্ভর অর্থনীতি। আম বিক্রি করেই চলে সারা বছরের সংসার খরচ। মৌসুমে এ অঞ্চলের আমচাষিরা থাকেন চরম কর্মব্যস্ত। অর্থনৈতিক প্রবাহে আসে গতি। কিন্তু এ বছরের চিত্র ভিন্ন। করোনা আর দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসতে পারছেন না। তাই বিক্রি হচ্ছে না আম। এতে আমের দামেও ধস নেমেছে। চাষিরা বলছেন, বিগত মৌসুমগুলোর তুলনায় এ বছর আমের দাম অর্ধেকেরও কম। ফলে তারা বাগান ইজারার টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় ও শ্রমিক খরচ না ওঠারও সংশয় দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের কয়েক লাখ কৃষক চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন। রাজশাহীতে আম বেচাকেনার সবচেয়ে বড় মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের পর এটিই দেশের সবচেয়ে বড় আমের হাট। সোমবার সকালে সরেজমিন হাটটিতে গিয়ে দেখা যায়, ক্যারেট সাজিয়ে বসে আছেন আমচাষিরা। হাট ভর্তি আম। কিন্তু ক্রেতা নেই। বানেশ্বর হাটে ভালোমানের ল্যাংড়া এক হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ফজলি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, লক্ষণভোগ বা লখনা ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা, আশ্বিনা ৪০০ টাকা, কালুয়া ১ হাজার ৩০০ টাকা, আম্রপালি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, তোতাপুরি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং হিমসাগর বা খিরসাপাত ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। পুঠিয়ার পার্শ্ববর্তী চারঘাট উপজেলা সদরের আমচাষি রুহুল আমিন বলেন, এখন খিরসাপাত ও ল্যাংড়ার শেষ সময়। শেষ সময়ে এ জাতের আম কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। অথচ এখন দাম ৩ ভাগের ১ ভাগ। এছাড়া গত বছর এই সময়ে আম্রপালি ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার, ফজলি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ এবং কালুয়া ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। হাটে আম বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের আবদুস সালাম বলেন, আমার ৩ বিঘা জমিতে আমের বাগান। নিজেই ভ্যানে আম নিয়ে এসেছি। ১০ মণ ফজলি আম আছে। কিন্তু দাম নেই। গত বছর এ আম দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৭শ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। অথচ এবার দাম ৬ থেকে ৭শ টাকা মণ। এ পরিমাণ আম গাছ থেকে নামাতে শ্রমিক বাবদ দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া আমের মুকুল আসার পর থেকে কীটনাশকসহ পরিচর্যায় ব্যয় হয়েছে আরও ৩০ হাজার টাকা। চারঘাট পৌরসভার থানাপাড়া মহল্লার আকবর আলী বলেন, আমার ৮০ বিঘা জমিতে আমের বাগান। এ পরিমাণ জমির ইজারা মূল্য ১২ লাখ টাকা। গাছে মুকুল আসার পর থেকে আম নামানো পর্যন্ত আরও খরচ হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। আনুষঙ্গিক খরচ আরও দুই লাখ টাকা। আমের মৌসুম প্রায় শেষ। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি।
বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার আমচাষি আবদুল করিম বলেন, এ মৌসুমে প্রচুর আম হয়েছে। কিন্তু পাইকার নেই। তাই দামও নেই। ফলে আমচাষিদের পথে বসার অবস্থা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, এ অঞ্চলে এবার আমের উৎপাদন বেশি। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও লকডাউনের কারণে এবার আমের দাম নেই। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারপরেও পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।