মদের বিপণন চেইনে এনবিআরের নজরদারি
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২১ , ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
দিনের শেষে প্রতিবেদক : সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভেজাল মদপানে বহু মানুষের মৃত্যুর পর মদের কায়কারবারের সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থার নানামুখী তত্পরতার কারণে অবৈধ উপায়ে মদের আমদানি কমেছে। কিন্তু চাহিদা থাকায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল মদ।
দেশে বৈধভাবে মদ আমদানিতে শুল্ককর সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ। এত বিপুল শুল্ক পরিশোধ করে মদ আমদানি করে তা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়ে দাম অনেক বেশি পড়ে। তবে একটি শ্রেণি বাড়তি ব্যয়ে বৈধভাবে আনা এ মদ গ্রহণ করেন। অন্যদিকে কূটনীতিক অঙ্গনে কর্মরত ব্যক্তি ও দেশে অবস্থানরত বিদেশি ‘প্রিভিলেজড পারসনদের’ জন্য আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদ আমদানি করা যায়। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী সব দেশই এ সুবিধা দিতে বাধ্য। এজন্য দেশে ছয়টি ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজ রয়েছে। এসব বন্ডেড ওয়্যারহাউজ থেকে এ তালিকায় থাকা বিদেশি নাগরিকরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদ নিতে পারেন।
এর বাইরে বিপুলসংখ্যক মানুষ অবৈধ উপায়ে আনা মদের ওপরই নির্ভরশীল। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের দেওয়া এ সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিপুল পরিমাণ মদ এনে বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো। এ অনিয়ম রোধে সম্প্রতি কঠোর অবস্থানে যায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে বেশকিছু শর্ত পরিপালনের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয় এবং গত কয়েক মাস ধরে তা নিয়মিত যাচাই করা শুরু হয়। ফলে আটকে যায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাড়তি মদ আমদানির সুযোগ। অন্যদিকে এনবিআরের আওতাধীন ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ রাজধানী জুড়ে অভিযান চালিয়ে গত কয়েক মাসে বেশকিছু মদের বার থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মদ উদ্ধার করে। এতে অন্য বারগুলোও সতর্ক হয়ে যায়। অন্যদিকে করোনার কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিমান যোগাযোগ কমে গেছে। আবার বিমানবন্দরগুলোতেও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে কমে যায় সরবরাহ।
এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিস শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় থাকা ছয়টি বারে মদের আমদানি ও সরবরাহ দেখভাল করে। এগুলো হলো সাবের ট্রেডার্স লিমিটেড, ইস্টার্ন ডিপ্লোমেটিক সার্ভিসেস, টস বন্ড, ন্যাশনাল ওয়্যারহাউজ, ঢাকা ওয়্যারহাউজ ও এইচ কবির অ্যান্ড কোম্পানি। এর মধ্যে পাঁচটি গুলশানে এবং একটি মহাখালীতে অবস্থিত। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিসের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রিভিলেজড পারসনদের শুল্কমুক্ত সুবিধার সনদ দিয়ে থাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অভিযোগ রয়েছে, অতীতে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধাপ্রাপ্ত বারগুলোতে এ সুবিধার আড়ালে বিপুল পরিমাণ শুল্কমুক্ত মদ এনে বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এতে বারগুলো লাভবান হলেও সরকার বিপুল রাজস্ব হারাতো। এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে ২০১৭ সালে এ অফিস আলোচ্য ছয়টি বন্ডেড ওয়্যারহাউজে মদ আমদানি, তা বিক্রির পাশ বই সংরক্ষণ ও ক্রেতার শুল্কমুক্ত সুবিধার সনদ দেখানো ও কোন ব্র্যান্ডের কতটুকু বিক্রি হলো, তা প্রতিমাসে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। তবে শুরুর দিকে তা পরিপালন না হলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যায় এনবিআর। ঐ আদেশটি সঠিকভাবে পরিপালনের জন্য এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট ছয়টি বারসহ দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।