আজকের দিন তারিখ ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় রক্তাক্ত হৃদয়ে’ হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে বিদায়

রক্তাক্ত হৃদয়ে’ হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে বিদায়


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৫, ২০২১ , ২:৩০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


দিনের শেষে প্রতিবেদক : তিনি লিখেছিলেন, ‘স্পর্শের আড়াল থেকে একান্ত উত্সব/ ছুঁয়েছিল রক্তাক্ত হৃদয়!’ কবিতার মতোই তিনি আজ স্পর্শের আড়ালে। পরিজন, শুভ্যানুধায়ী, গুণগ্রাহীরা তাকে রক্তাক্ত হৃদয়ে বিদায় জানালেন। বললেন, তিনি থাকবেন তার কর্মের মধ্যে, কীর্তির উল্লাসে। মঙ্গলবার (২৫ মে) সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অমৃত্যু তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সোমবার (২৪ মে) রাত ১১টায় রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাবীবুল্লাহ সিরাজী। এরপর তার মরদেহ ছিল হাসপাতালের হিমাগারে। সেখান থেকে মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার কর্মস্থলে। বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চের বটতলার ছায়াতলে রাখা হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যক্তি ও সংগঠন। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে এখানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চের বটগাছের ছায়াতলে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন যোরা সিরাজী। দীর্ঘদিনের সঙ্গীকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল। বিড়বিড় করে পাঠ করছিলেন কলেমা। পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষটা হঠাৎ করেই চলে গেল। কিছুদিন আগেই তার কোলন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। গেলো মাসে একটা অপারেশনও হয়। অপারেশনের পর তার টিউমার অপাসরণ করতে গিয়ে সেটি ফেটে যায়। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। এরপরও ডাক্তাররা চেষ্টা করছিলেন, আমরাও আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু সবকিছু শেষ করে কাল রাতে মানুষটা চলে গেল। কথাগুলো বলতে বলতে চোখের কোণে বারবার জমে উঠছিলো অশ্রুমালা। পরিবারের সদস্যরা বুকে জড়িয়ে সমবেদনা জানাতে থাকেন তাকে। তার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বললেন, কি বলবো বলেন? আমি শোক বার্তা দিতে দিতে ক্লান্ত। এই করোনার সঙ্গে যুদ্ধে আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গণ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কর্মকে বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, একজন সফল মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। তিনি দক্ষতার মাধ্যমে বাংলা একাডেমির প্রশাসন পরিচালনা করেছেন। তার চলে যাওয়ায় যে শূণ্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। আমার কাছে তার বিকল্প নেই। দীর্ঘ আট বছর জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছিলেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তার কমিটিতে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন বর্তমান সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কবিতা পরিষদের ব্যানারে সেমিনার, ওয়ার্কশপসহ নানা কার্যক্রম করেছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামান বলেন, তিনি শুধু একজন কবি কিংবা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আপদামস্তক সাহিত্যিক। তিনি বলতেন, ‘কবিতা শুধুমাত্র কিছু কথামালা নয়। এর মধ্যে একটি দর্শন থাকতে হবে। ’ তিনি নিজেও সেভাবেই লিখেছেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার তিনটি অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা করেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। যার প্রতিটিতেই ছিল নতুনত্বের ছোঁয়া। এ তিনবারই মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব ছিলেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ।
তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মতো মানুষকে মহাপরিচালক হিসেবে পেয়ে বাংলা একাডেমির উপকৃত হয়েছে। তিনি যে তিনবার বইমেলা আয়োজনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার প্রতিটিতেই নতুনত্বের ছোঁয়া ছিল। বিশেষ করে ২০২০ সালের মেলা আমাদের ইতিহাসের সেরা মেলা। তিনি যেভাবে মেলা আয়োজনে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে নাট্যাভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, করোনার এ দুঃসময়ে আমরা আমাদের প্রিয় মানুষদের হারাচ্ছি। তাদের মতো মানুষের চলে যাওয়া আমাদের সংস্কৃতি ও দেশের জন্য বড় ক্ষতি। তিনি ছিলেন একজন বড় মাপের কবি ও মানুষ। বাংলা একাডেমির শ্রদ্ধানুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলা একাডেমির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলা একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম লোকমান। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। জাতীয় কবিতা পরিষদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত। আরো শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ রাইর্টার্স ক্লাব, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। শ্রদ্ধা নিবেদনে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
বাংলা একাডেমি থেকে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে আজিমপুর কবরস্থানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত, ছড়াকার আনজীর লিটন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, প্রকাশক আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশিদ, প্রকাশক শ্যামল পাল প্রমুখ।