আজকের দিন তারিখ ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতন : গ্রেফতারকৃতদের ফিরিয়ে আনবে পুলিশ

ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতন : গ্রেফতারকৃতদের ফিরিয়ে আনবে পুলিশ


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৮, ২০২১ , ১২:১৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


দিনের শেষে প্রতিবেদক : সম্প্রতি ভারতের কেরালায় এক বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতন ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনার মূলহোতা রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশ পুলিশ। তাদেরকে ফিরিয়ে আনার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৮ মে) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বেঙ্গালুরু পুলিশ নারীসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে। বেঙ্গালুরু পুলিশকে বার্তা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় বাংলাদেশি আসামিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি এক তরুণীকে ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বেঙ্গালুরু পুলিশ বাদী হয়ে দুই নারীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও লাঞ্ছনার মামলা দায়ের করে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এক নারীসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, শেখ মোহাম্মদ বাবা, সাগর ও অখিল। গ্রেফতার দুই নারীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার কমল পান্তের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বেঙ্গালুরু পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফাতার করেছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভুক্তভোগী তরুণী একজন বাংলাদেশি। তাকে পাচারের জন্য ভারতে আনা হয়েছিল।
এদিকে, এই ঘটনায় ভিডিও দেখে নিজের মেয়েকে শনাক্ত করে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচারের মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশীদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। এখন আমরা তদন্ত শুরু করব এবং ভুক্তভোগীকে দেশে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। এছাড়া আসামিদের ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মামলার এজাহারে ভুক্তভোগীর বাবা জানান, তিনি মগবাজার এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন। তার মেয়ের ৬-৭ বছর আগে বিয়ে হয়। স্বামী ৩ বছর ধরে কুয়েতে থাকেন। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকে তিনি (ভুক্তভোগী) বাবা ও শ্বশুরবাড়ি উভয় জায়গায় থাকতেন। ১৫ মাস আগে বাবাকে জানান, তিনি (ভুক্তভোগী) দুবাই যাবেন। বাবা তাকে বারণ করেন। তবে ১ বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন, মগবাজারের রিফাতুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় তাকে ফুসলিয়ে বিক্রির জন্য পাচার করেন। কিছুদিন আগে ভুক্তভোগীর বাবা জানতে পারেন, মেয়েটি হৃদয়ের সঙ্গে ভারতে আছেন। সম্প্রতি ভাইরাল ভিডিওটি দেখে তিনি মেয়েকে চিনতে পারেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, ভারতে নিয়ে গিয়ে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে এক মেয়েসহ তিন-চারজন ভুক্তভোগীর হাত-পা-মুখ চেপে ধরে অমানুষিক যৌন নির্যাতন করে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে ৩-৪ জন যুবক শারীরিক ও বিকৃতভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ভিডিওটি ধারণ করা হয় ভারতে। ওই ভিডিওতে থাকা যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে ঢাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ফেসবুক আইডি তদন্ত করে তার আসল নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর তার মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানো হলে প্রথমে অস্বীকার করলেও তারা পরবর্তীতে ভিডিওতে থাকা এক যুবক হৃদয় বলে স্বীকার করেন। পাশাপাশি হাতিরঝিল-মগবাজারের স্থানীয়রাও হৃদয়কে শনাক্ত করে। স্থানীয়ভাবে তিনি ‘টিকটক হৃদয়’ নামে পরিচিত। তার বয়স ২৬ বছর। তিনি বলেন, টিকটক হৃদয়ের মা ও মামা পুলিশকে জানায়, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে বাসার কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, কৌশলে টিকটক হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে হৃদয়ের ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তখন সে জানায়, গত তিন মাস আগে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটে ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে।
হৃদয় আরও জানান, ভিডিওর ভুক্তভোগী একজন বাংলাদেশি তরুণী। তার বয়স ২০-২২ বছর হবে। ঢাকায় তার বাসা। ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভুক্তভোগীর একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ড পাঠায়।
হৃদয় জানান, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় হৃদয় ও তার কয়েকজন বন্ধু জড়িত ছিল। ঘটনাটি ঘটে ভারতের কেরালায়। ওই ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে আগে থেকেই তার পরিচয় ছিল বলে জানান তিনি। তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, হৃদয়ের দেয়া তথ্যমতে তরুণীর পরিবারের সন্ধান পেয়েছি। পরিবার তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করেছে। পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির গত দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না। হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রমনা থানায় তার নামে দায়ের হওয়া একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার এজাহার ও এফআইআর কপি জব্দ করা হয়েছে।
ডিএমপির এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হৃদয় বর্তমানে ভারতের পুনেতে অবস্থান করছে জানালেও তার প্রকৃত অবস্থান শনাক্তের পাশাপাশি সে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে। হৃদয়ের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যারা যৌন নির্যাতনে অংশগ্রহণ করেছে তাদের পরিচয়ও শনাক্তের পাশাপাশি তারা বাংলাদেশি না ভারতীয় নাগরিক তা যাচাই চলছে। ভারতে যেহেতু ঘটনাটি ঘটেছে সেক্ষেত্রে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। ভারতীয় পুলিশের কাছে যোগাযোগ করা হয়েছে কি-না এই প্রশ্নের জবাব এই ডিএমপি কর্মকর্তা বলেন, মেয়েটিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার স্থায়ী ঠিকানা শনাক্ত করা হয়েছে। তার বাবা-মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরবর্তীতে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরে আমরা দ্রুত মেয়েটিকে ফেরত এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। তেজগাঁও বিভাগের ডিসি শহিদুল্লাহ আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে এরা একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র। যারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অসহায় ও বিদেশে গমনে ইচ্ছুক নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়েটিকে উদ্ধার ও যারা তাকে যৌন নির্যাতন করেছে তাদেরকে ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণীর স্বামী কুয়েতে থাকেন। ২০১৪ সালে তাদের প্রেম করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তরুণীর শ্বশুরবাড়ির লোকদের অত্যাচার সহ্য করতে হতো। সেই কারণে তরুণী বিয়ের প্রায় পাঁচ বছর পর পর্যন্ত বাবার বাড়িতে থাকেন।
বাবার আর্থিক অনটনের কথা চিন্তা করে তরুণী বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করেন। তার বাবা এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠাতে গিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা হারান। এরপর ওই তরুণী কাউকে কিছু না জানিয়ে ভারতে চলে যান।