আজকের দিন তারিখ ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় বকশিসের ৫০ টাকা কম থাকায় প্রাণ হারায় সেই স্কুলছাত্র

বকশিসের ৫০ টাকা কম থাকায় প্রাণ হারায় সেই স্কুলছাত্র


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ৪:৫৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


দিনের শেষে ডেস্ক :  বকশিসের টাকা না পেয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেয়ায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‍্যাব বলছে, ঘটনার দিন আসাদুল মীর ধলু ভিকটিমের অভিভাবকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা দাবি করে এবং পরবর্তীতে ২০০ টাকায় রাজি হয়। এদিকে ভিকটিমকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক জরুরী সেবাসহ অক্সিজেন দিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। এরপর রোগীর অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা চায় ধলু। কিন্তু রোগীর অভিভাবকের কাছে থাকা ১৫০ টাকা দেয়ার পর সে বাকী ৫০ টাকা দাবি করলে ভিকটিমের অভিভাবক আর কোন টাকা নেই বলে জানায়। তখন আসাদুল ধলু উত্তেজিত হয়ে বিকাশ চন্দ্র দাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালি গালাজ করে। এরপরই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়।

বগুড়ার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-১২) একটি দল বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ভোরে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র‍্যাব সূত্র জানায়, ভিকটিম স্কুলছাত্র বিকাশ চন্দ্র দাশ (১৭) গাইবান্ধার স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে গ্রীল ওয়েল্ডিং এর কাজ করে নিজের পড়াশোনার ও পরিবারের খরচ চালাত বলে জানা যায়।

র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত মঙ্গলবার ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে গাইবান্ধার সাঘাটাতে দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে স্থানীয় হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে বগুরার বর্ণিত হাসপাতালে নিয়ে যায়। উক্ত হাসপাতালে পৌছালে জরুরী বিভাগের হাসপাতালের দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিমের অভিভাবকের কাছ থেকে চিকিৎসা দালালীর নামে ৫০০ টাকা দাবি করে এবং পরবর্তীতে ২০০ টাকায় রাজি হয়।

তিনি আরও বলেন, ভিকটিমকে জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক জরুরী সেবাসহ অক্সিজেন দিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। অতঃপর ভিকটিমকে মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। বেড না থাকায় ভিকটিমকে ফ্লোরে বেড দেয়া হয়। অতঃপর ভিকটিমের অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা চাইলে তাদের কাছে ১৫০ টাকা থাকায় তাকে ১৫০ টাকা দেয়া হয়। তখন সে আরো টাকা দাবি করলে বিকাশ চন্দ্র দাশের অভিভাবক বলে আমাদের কাছে আর কোন টাকা নেই। তখন মো. আসাদুল ইসলাম ধলু উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালি গালাজ করে। এরপরই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভিকটিমের মৃত্যু হয়। তখন হাসপাতালে অন্যান্য রোগী ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন লোকজন জড়ো হয়। এ সময় হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্ট করে। তখন সুযোগ বুঝে মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশ মৃত্যুর ঘটনায় ১০ নভেম্বর দিবাগত রাতে বগুড়া সদর থানায় মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু’কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। উক্ত নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। র‌্যাব এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আসামীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

কেই এই আসাদুল মীর ধলু

গ্রেপ্তারকৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশের অক্সিজেন মাস্ক বিচ্ছিন্ন করায় বিষয়টি স্বীকার করেন গ্রেপ্তার আসাদুল ইসলাম মীর ধলু।

আসাদুল ইসলাম মীর ধলু সম্পর্কে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বিগত ৬ বছর যাবত উক্ত হাসপাতলে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করছে। প্রতিদিন সে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করার পর বিকেল থেকে হাসপাতালের জরুরী আউটডোরে রোগীদেরকে ট্রলিতে করে পৌঁছে দেয়া বা অন্যান্য দালালীসহ বিভিন্ন কাজ করতো। সে এই কাজের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতো জানায়। এই ঘটনার পর সেখান থেকে সে প্রথমে নওগাঁ ও পরবর্তীতে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করে।