আজকের দিন তারিখ ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// ফাঁকা রাখা হবে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের আসন

ফাঁকা রাখা হবে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের আসন


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৭, ২০২০ , ৪:২৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে ডেস্ক :   মন্ত্রী-এমপিসহ সংসদ সচিবালয়ে কর্মরতদের মধ্যে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস সংক্রণের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। সুস্থদের থেকে পৃথক করে আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন নিশ্চিত করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সংক্রমণের উর্দ্ধগতি। বুধবারও নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীসহ সংসদ সচিবালয়ের ২৫ কর্মকর্তা। এদের অনেকেই সংসদ সচিবালয়ে দায়িত্বপালণ করে আসছিলেন।

এদিকে সংক্রমণ লুকিয়ে অনেক এমপি-মন্ত্রী বাজেট অধিবেশনে যোগ দেয়ার খবর এরইমধ্যে চাউর হয়েছে, যাদের অনেকেই সহকর্মী সংসদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সংস্পর্শে গিয়েছেন। যেকারণে আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠেয় সংসদের মুলতবি অধিবেশন ঘিরে ভয় আর আতঙ্ক ভর করেছে সবার মনে। একই ভাবনায় সংসদ কর্তৃপক্ষও। নিত্যদিন অব্যাহতভাবে সংসদ সংশ্লিষ্টদের মাঝে করোনার রেজাল্ট পজিটিভ আসতে থাকায় এখন অন্যতম ভাবনা হয়েছে দাঁড়িয়েছে অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সংসদ সচিবালয়ের একটি সূত্র জানায়, সংসদে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে অধিবেশন কক্ষের আসল বিন্যাস করা হচ্ছে নতুন করে। রোস্টার অনুযায়ী উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং রোস্টারের বাইরের কাউকে অধিবেশন কক্ষ্যে প্রবেশে আরোপ করা হবে কড়াকড়ি। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় এবং সংদের ভিভিআইপি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নতুন আসন বিন্যাসের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের সবক’টি চেয়ার ফাঁকা রাখার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। সংসদ সদস্য এবং অধিবেশন কক্ষে কর্মরতদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনাও আসতে পারে বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে সংসদে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা ২ জুন থেকে শুরু হয়েছিল। ৮ জুন ওই পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। অধিবেশন শুরুর পর এই ক’দিনে নতুন আক্রান্ত বেড়িয়েছে ৪৫ জন। অনেকে আবার আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে রেজাল্ট নেগেটিভে নিয়ে আসলেও কর্মস্থলে ফিরে নতুন করে আবারো আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।

করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে এসএসএফের সুপারিশে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাদের নমুনা পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ এসেছে, তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সংসদের নিরাপত্তা দপ্তর থেকে তাদের সংসদে না যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আক্রান্তদের সবাই সরাসরি সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত নন। সংসদ ভবন সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত অধিদফতরসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন।

সংসদের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক শেখ মো. ইউনূস আলী বলেন, আক্রান্ত যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো উপসর্গ নেই। শনাক্ত হওয়ার পর তারা বাসায় আইসোলেশনে যাচ্ছেন। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে করোনাভাইরাস সঙ্কটকালে চলমান বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রোস্টার তৈরির আগে অধিবেশনে একেবারেই অংশগ্রহণ করবেন না, এমন আক্রান্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হয়। এমন অন্তত ৩৫ জনের মতো সদস্যের তালিকা তৈরি করে তাদের অধিবেশন শুরুর আগেই না আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনো কোনো সংসদ সদস্য নিজে, তার পরিবারের সদস্য বা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে এই সংখ্যা ইতোমধ্যে বেড়েছে। অধিবেশনের বাকি সময়ের মধ্যে এই তালিকা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অসুস্থ ও বয়স্কদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহ করার কারণ হিসেবে হুইপরা জানান, অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য এমপিদের সংখ্যা ৬০ থেকে ৮০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হলেও অধিবেশন চলাকালে আরো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেন। সংসদ সদস্যসহ সাপোর্টিং স্টাফ, গ্যালারিতে অবস্থানকারী অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অত্যাবশ্যকীয় ব্যক্তিবর্গ মিলিয়ে দেড় শতাধিক মানুষ অধিবেশন কক্ষে অবস্থান করেন। বায়ুরোধী ও সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ কক্ষে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ছড়িয়ে পড়ে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মূলত এ কারণে অসুস্থ ও বয়স্কসহ আক্রান্ত ও আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা সংসদ সদস্যদের না আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সংসদ সচিবালয়। প্রবীণ ও অসুস্থ সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে আসতে নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। সংসদের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। তবে যারা করোনা পজিটিভ, তাদের সবাইকে নিষেধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া বাজেট অধিবেশনের পরিসরও কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।