আজকের দিন তারিখ ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় খুলনাসহ সারাদেশে ২০০০ কি. মি. মহাসড়ক উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

খুলনাসহ সারাদেশে ২০০০ কি. মি. মহাসড়ক উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ডিসেম্বর ২০, ২০২২ , ৪:৫৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


মিজানুর রহমান আকন (বাগেরহাট প্রতিনিধি) : ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে ১৪ বছর আগে যে যাত্রা সূচনা করেছিল বর্তমান সরকার। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে আজ। এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। দিন বদলের এই যাত্রা অব্যাহত রয়েছে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও। এরই ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রাণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের খুলনা বিভাগের ৩৫২.২৬ কিলোমিটারসহ সারাদেশে ২০০০ কিলোমিটার উন্নয়নকৃত মহাসড়ক আগামীকাল বুধবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের সময়ে সাফল্য পেয়েছে এমন খাতের অন্যতম হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৪ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, গুরুত্বপূর্ণ শহর, বন্দর ও বাণিজ্যিক পয়েন্টে দেশের যেকোনো প্রান্তে অনায়াসে পৌঁছানো যায় এখন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে সারা দেশে সড়ক সংস্কার, নতুন সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণের ফলে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান। সরকারের প্রতিটি উন্নয়নের সুফল মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে সারাদেশে সমানতালে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রামীণ জীবন মান পাল্টে যাওয়ার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন।

গত ১৪ বছরে সারা দেশে প্রতিটি গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে সড়ক স্থাপন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে সর্বাধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন সড়ক, পাশাপাশি সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও টেকসই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আইটিএস ও অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগেই বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো স্মার্ট হিসেবে নির্মিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় অনগ্রসর জনপদের গণমানুষের জীবন মান উন্নয়ন এবং প্রতিবন্ধহীন সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপনের অভিলক্ষ অর্জনে সমগ্র দেশে আগামীকাল একই সঙ্গে ২০০০ কিলোমিটার উন্নয়নকৃত মহাসড়ক উদ্বোধন করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে ৫০টি জেলায় ১০০টি মহাসড়কে উন্নয়ন করা হয়েছে, যার সর্বমোট দৈঘ্য ২,০২১.৫৬ কিলোমিটার। মোট ১৪,৯১৪.৯৫ কোটি টাকা ব্যয়। উন্নয়কৃত মহাসড়কের মধ্যে খুলনা বিভাগে ৩৫২.২৬ কিলোমিটার, ঢাকা বিভাগে ৬৫৩.৬৬ কিলোমিটার, চট্রগ্রাম বিভাগে ২৫৮.৯০ কিলোমিটার, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪২.৪৮ কিলোমিটার, সিলেট বিভাগে ১০৬.১৮ কিলোমিটার, বরিশাল বিভাগে ১০৭.২৬ কিলোমিটার, রাজশাহী বিভাগে ১৯৬.৮৭ কিলোমিটার এবং ২০৩.৯৫ কিলোমিটার মহাসড়ক অবস্থিত রংপুর বিভাগে।

এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ৩৫২.২৬ কিলোমিটার সড়কের অন্যতম গুরুত্ব পূর্ন খুলনা সড়ক বিভাগের বাস্তবায়িত খুলনা- চুকনগর-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৭৬০)টি ৫৩.৮০.কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দর সাতক্ষীরার ভোমরা -স্থলবন্দরের সাথে সারা দেশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মহাসড়কটি খুলনা বিভাগীয় শহরের সাথে খুলনার ডুমুরিয়াধ,পাইকগাছাকে সাতক্ষীরা জেলাকে সংযুক্ত করে এবং যশোর খুলনা রুট হিসাবে ব্যবহার হয়। এই এলাকার আইন শৃংখলা রক্ষাসহ আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে সড়কটি বড় ধরনের ভুমিকা পালন করে। রাজধানীর সঙ্গে পদ্মা সেতু হয়ে দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটার। ফলে ভারতের থেকে পাথরসহ বিভিন্ন পন্য আমদানি এবং মাছসহ বিভিন্ন পন্য রপ্তানিতে বাঁচবে সময় ও পরিবহন ব্যায় । সুন্দরর বনভ্রমনে দেশী বিদেশী পর্যটকরা এই সড়কটি ব্যাবহার করে। ফলে জন সাধারনের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মহাসড়কটি গুরুত্ব আপরিসীম । সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়ক হলেও সরাসরি ভোমরা -স্থলবন্দরের সাথে সংযুক্ত হওয়ায় এর গুরুত্ব জাতীয় মহাসড়কের ন্যায়। বাগেরহাট চিতলমারী – পাটগাতী মহাসড়ক-( জেড৭৭০৮)ও ( জেড৭৭০৫৪) ৩৮.৩০কিলেমিটর সড়ক নির্মাণের ফলে বাগেরহাটে হযরত খানজাহান আলী (র:) মাজার,ষাট গুম্বজ মসজিদ এর সাথে এবং গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল সংযোগ স্থাপন হয়েছে। ফলে দেশী বিদেশী পর্যটকরা সহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেনি মানুষ সল্পসময় বাগেরহাটে হযরত খাজাহান আলী (র:) মাজার জেয়ারত , ষাট গুম্বজ মসজিদ পরির্দশন ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা ও জেয়ারত করতে পারবে।

গোপালগঞ্জের সাথে বাগেরহাটের দূরত্ব কমবে প্রায় ২০ কিলোমিটার। নওয়াপাড়া-বাগেরহাট-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৭৭০) ৩৯.৫০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ফলে বরিশাল বিভাগের জেলা গুলোর সঙ্গে পিরোজপুর হয়ে খুলনা বিভাগীয় শহরের সাথে যোগাযোগ সহজহবে। যশোর- বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক (এন-৭০৬) উন্নয়নের ফলে রাজধানী ঢাকার সাথে বেনাপল বন্দর হয়ে দ্রুত সময় কলকাতা যেতে বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ যেতে পারবে ফলে সময় অর্থ দুটিই ব্যায় কমবে। গাজীপুরের জয়দেবপুর -টাঙ্গাইল জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪)৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে ধীরগতিরসহ পৃথক লেন নির্মিত মহাসড়টি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ঝড়ঁঃয অংরধ ঝঁন-জবমরড়হধষ ঊপড়হড়সরপ ঈড়ড়ঢ়বৎধঃরড়হ (ঝঅঝঊঈ) ফারামের সাথে সংশ্লিষ্ট সড়কসমূহের মধ্যে অগ্রাধিকার উন্নয়নের ভিত্তিতে। বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও মিয়ানমার নিয়ে গঠিত ঝঅঝঊঈ ফারামের উদ্দেশ্য উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ দৃঢ়করণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। এই প্রকল্পের নির্মিত গাজীপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ায় রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমূহের সাথে যোগাযোগ সহজ হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এই জাতীয় মহাসড়কটি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির তত্ত্বাবধানে এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৮টি জোন প্রকৌশলীদের জ্ঞান, মেধা, অভিজ্ঞতা ও উদ্বাবনী শক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ দেশব্যাপী উন্নয়কৃত ৮ টি বিভাগে দুই সহস্রধিক কিলোমিটার মহাসড়ক বর্তমান সরকারের আজ অন্যতম উন্নয়নের রোল মডেল। এর ফলে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ হয়ে উঠবে আরও শক্তিশালী। যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ দ্রুত, সহজতর ও নিরাপদ হয়ে উঠবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌছে যাবে দুর্গম এলাকার জনগণের দ্বারপ্রান্তে, বিকশিত হবে দেশের অর্থনীতি। নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বৃদ্ধি পাবে কৃষিজ উৎপাদন ও বিপনন এবং নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা।