আজকের দিন তারিখ ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য কাল বাজেট: ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় লাখো বিনিয়োগকারী

কাল বাজেট: ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় লাখো বিনিয়োগকারী


পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১, ২০১৬ , ৬:৪৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


5কাগজ অনলাইন ডেস্ক: ২০১০ সালে ধসের পর থেকে সরকার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য নানা প্রণোদনা দিয়েছে। প্রতিবছর বাজেটে তাদের স্বার্থে কিছু প্রস্তাবনাও রাখা হয়। কিন্তু সেই অর্থে এখনো বাজারে স্থিতিশীলতা আসেনি। হাজার হাজার বিনিয়োগকারী চার পাঁচ বছরেও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

আগামীকাল বৃহস্পতিার সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই বাজেটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকার কী ধরনের পদেক্ষপ রাখছে তা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী।

২০১০ সালে ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর বেশ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ফেরেনি। নানা ইস্যুতে অস্থিরতা লেগেই আছে। ধারাবাহিক দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় টান পড়ছে।

তবুও বিনিয়োগকারীদের আশা, আসন্ন জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব, দিক নির্দেশনা দেবে সরকার। তাতেই ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালের আগে যারা বিনিয়োগ করেছেন তাদের লোকসানের পরিমাণ এখনো ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হওয়া মার্জিন ঋণের বোঝা তাদের ক্ষতি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পরবর্তী প্রথম কার্যদিবস (২০১৫ সালের ৭ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ১১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর আজ বুধবার (১ জুন) লেনদেন শেষে বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১২৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকায়। অর্থাৎ মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এসময় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয়েছে ১৯৬ পয়েন্ট। একই সময়ে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৩৪ কোটি টাকা। আজ লেনদেন শেষে বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ মূলধন কমেছে ১৪ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে ডিএসইর পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পুঁজিবাজারে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পৃথককরণ (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) বাস্তবায়নের পরবর্তী পাঁচ বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া।

বর্তমানে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে (২০১৬-১৭) অর্থবছরের বাজেটে এক লাখ টাকা করার দাবি করেছে ডিএসই। এতে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে যা বাজার স্থিতিশীলতায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে বর্তমানে স্টেকহোল্ডারদের শেয়ার লেনদেনের ওপর দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হয়। তা কমিয়ে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়াও নির্বাসী এবং অনির্বাসী বাংলাদেশিদের কর কর্তন ৮২ সি ধারার অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা, স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজড শেয়ার হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি হতে অব্যাহতি দেয়া, ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৪ এর সেকশন ২ এর সাবসেকশন (৩৫) এর অধীনে আয়বর্ষের সংজ্ঞা পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তাব করেছে ডিএসই।

ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, আমরা বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে এনবিআরের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি। আশা করি বাজেটে ডিএসইর দেয়া প্রস্তাবনাগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হবে।

ডিএসইর নতুন নির্বা‌চিত পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান মনে করছেন, বর্তমানে বি‌নি‌য়োগকারী‌দের ম‌ধ্যে আস্থার সঙ্কট র‌য়ে‌ছে। আস্থা ফেরাতে সরকা‌রের পক্ষ থে‌কে আগের মতো নী‌তি সহায়তার পাশাপা‌শি বা‌জে‌টে স‌র্বোচ্চ মহলের পুঁজিবাজার বিষ‌য়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দরকার।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ধসের পর সরকার আমাদের প্রণোদনা দিয়েছে। তবে যদি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড দেয়া হতো তাহলে বাজার স্থিতিশীলতায় তা ভূমিকা রাখতে পারতো।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের ধস এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেক বিনিয়োগকারী। আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আগামী বাজেটে বিনিয়োগকারীর সুবিধার কথা বিবেচনা করে প্রস্তাবনা আনা হবে বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) বিকেলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারের বাজেট হবে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার, যা গত বছরের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি।