আজকের দিন তারিখ ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য ব্রির গবেষণার তথ্য : দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই

ব্রির গবেষণার তথ্য : দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ৯, ২০২০ , ২:৩৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর গবেষণায় দেখা গেছে চালের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বোরো ও আমন মওসুমের উদ্বৃত্ত  উৎপাদন থেকে হিসাব করে, জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ২০.৩১ মিলিয়ন টন চাল ছিল। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরেও ৫.৫৫ মিলিয়ন টন চাল দেশের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত থাকবে। নভেম্বর পর্যন্ত ১৬.৫০ কোটি মানুষের চাহিদা মেটানোর পরেও ৩৬-৭৮ দিনের চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। তদুপরি নভেম্বরের মধ্যে ফুড বাস্কেটে নতুনভাবে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হলে, বাংলাদেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির কোন আশঙ্কা থাকবে না।
রোববার করোনাকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক এক ওয়েবিনারে গবেষণা তথ্য প্রকাশ করে ব্রি। প্রধান অতিথি হিসেবে এতে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মুখ্য আলোচক ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমানারা খানুম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ পুলের সদস্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. এস এম নাজমুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ‎প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান।
এই ওয়েবিনার আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল কোভিড-১৯ সময়কালীন খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, ধানের উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা এবং উৎপাদনে বৃদ্ধিতে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করা। ওয়েবিনারে জানানো হয়, কোভিট-১৯ কালীন ও পরবর্তী দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি দেশি-বিদেশি সংস্থার বরাত দিয়ে অনেক বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারিত হচ্ছে যা জনমনে এবং পলিসি লেভেলে অস্বস্তি তৈরি করছে। ব্রি মনে করে, এই ওয়েবিনার দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্ভুত সকল বিভ্রান্তি নিরসন করবে।
ওয়েবিনারে বলা হয়, ব্রি মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত ৫টি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এগুলোর মধ্যে হাওরের ধান কর্তনে শ্রমিক ও যান্ত্রিকীকরণের ভূমিকা, সুপার-সাইক্লোন আম্পানের প্রভাব নিরূপণ, ধান চালের মজুদ পরিস্থিতি এবং বাজারমূল্যে এর প্রভাব, ৬৪ জেলায় কৃষকের মাঠের ফসল কর্তন এবং আউশ আবাদ পরিস্থিতি নিয়ে র‌্যাপিড সার্ভের মাধ্যমে করোনাকালীন সময়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এসব গবেষণার বিশ্লেষণে ৬৪টি জেলায় ব্রি কর্তৃক ১০৪৮টি এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ২,১৩,৮৬৯টি ফসল কর্তনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।  এই সার্ভে কার্যক্রমে দেশের ৩৮টি জেলার ৫৭টি উপজেলা এবং ফলন কর্তনে ৬৪টি জেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ওয়েবিনারে বিগত দশ বছরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২০১০ সালে যেখানে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল চতুর্থ। বর্তমানে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, গবেষণা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটি অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় মাইলফলক। যদিও ইউএসডিএ ধানের উৎপাদন নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ০.২৮ ভাগ কমে যাবে, কিন্তু বাস্তবে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে ৩৮.৭ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে।
ব্রির জরিপ থেকে দেখা গেছে, ফলন, আবাদকৃত এলাকা, উৎপাদন ও চালের অভ্যন্তরীণ মজুদ পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় এ বছর সকল কৃষি অঞ্চলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ বৃদ্ধির হার সারাদেশে গড়ে শতকরা ৮.৪ ভাগ। ডিএই’র ৬৪ জেলার ক্রপ-কাট এর ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, ধানের ফলন গড়ে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ব্রি’র ১০৪৮টি কৃষকের মাঠে ক্রপ-কাট এর ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, সারাদেশে ধানের ফলন গড়ে ২.৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত দুবছর ধানের দাম ক্রমাগত হারে কম থাকায় এবছর বোরো আবাদি জমির পরিমাণ কিছুটা কমে গিয়েছে যা গত বছরের তুলনায় শতকরা ০.৭১ ভাগ। অন্যদিকে এ বছর বোরো ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষক আউশ চাষে ঝুঁকেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ ভাগ বেশি জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে।
ব্রির গবেষণায় দেখা যায়, চালের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরপক্ষে, ডিএই’র ক্রপ কাটের তথ্য অনুযায়ী ৩.১৮ শতাংশ এবং ব্রির ক্রপ কাট অনুযায়ী ৩.৯৪ শতাংশ চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বোরো মওসুমে এ বছর চালের উৎপাদন হয়েছে ২০.২৬ মিলিয়ন টন যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৮ শতাংশ বেশি। এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভালো আবহাওয়া, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা, দাম কমানোর ফলে ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, ব্রি-ডিএই যৌথ উদ্যোগে ১৪টি কৃষি অঞ্চলে আঞ্চলিক কর্মশালা, বোরো মওসুমের শুরুতে কৃষক প্রশিক্ষণ এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এ বছর আউশের উৎপাদন হবে ৩.৫৬ মিলিয়ন টন। কিন্তু বন্যার কারণে আউশের প্রত্যাশিত উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধান কাটা মওসুমে কাঁচা ধানের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি থাকায় কৃষকের মোট আয় শতকরা ১৬.৭ ভাগ বেড়েছে। বোরো ধান চাষীদের তথ্য মতে, এ বছর তারা গড়ে বিঘাপ্রতি ১৬০৪ টাকা লাভ করেছেন যেখানে গত বছর তাদের লোকসান গুণতে হয়েছিল। এবছর কর্তনকালীন সময়ে এবং ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে কৃষক গত বছরের তুলনায় কম পরিমাণ ধান বাজারে বিক্রয় করেছেন। একদিকে ভবিষ্যৎ খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা অন্যদিকে ধানের দাম বেশি থাকায় অল্প ধান বেচেই কৃষক কৃষি ও পরিবারের খরচ বহন করতে পেরেছেন। বেশি দামের আশায় ধান মজুদ করার প্রবণতা বাড়তে দেখা গেছে।
গবেষণায় ধান চালের মজুদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, গত বছর জুন মাসে কৃষকের গোলায় মোট মজুদের ২০ শতাংশ ধান ছিল, যা এবছর একই সময়ে প্রায় ২৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে চাল মজুদের বেলায় দেখা যায়, সরকারসহ (গতবছর জুন পর্যন্ত সরকারি মজুদ ছিল ১২.৫৬ লক্ষ টন যা এবার কমে ৯.২৭ লক্ষ টনে দাঁড়িয়েছে) অন্যান্য চাল ব্যবসায়ীরা গত বছরের তুলনায় কম পরিমাণে চাল মজুদ করেছেন। সার্বিকভাবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ধান-চাল মজুদের প্রবণতা কিছুটা বেশি থাকলেও সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হয়নি।