আজকের দিন তারিখ ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় সুদিন ফেরায় বিধবা ভাতাকার্ড ফেরত দিলেন বগুড়ার লাজিনা

সুদিন ফেরায় বিধবা ভাতাকার্ড ফেরত দিলেন বগুড়ার লাজিনা


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৯, ২০২১ , ২:৪৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় সংসারে সুদিন ফিরে আসায় লাজিনা বেওয়া নামে এক বিধবা তার ভাতাকার্ড ফিরিয়ে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) লাজিনা বেওয়া ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে মায়ের আদেশ অনুযায়ী গত ৭ জুন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে বিধবা ভাতাকার্ড ফেরত দেওয়া হয়। সমাজে অনেক অসহায় মানুষ যখন জনপ্রতিনিধিদের ঘুষ দিয়েও বিধবা ভাতাকার্ড পাচ্ছেন না ঠিক তখন উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ধুলাতইর গ্রামের মৃত হাদিস আলীর স্ত্রী লাজিনা বেওয়া সেই ভাতাকার্ড ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ছেলে সরকারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। আর এ কারণেই পারিবারিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে তার কার্ডটি ফেরত দেওয়া হয়।
মামুনুর রশিদ বলেন, আমার মা নিরক্ষর হওয়া শর্তেও তিনি সৎ ও সত্যবাদী। তিনি আমাদের তিন ভাই-বোনকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন। তিনি সর্বদা আমাদের হালাল খাইয়েছেন ও হারাম থেকে দূরে থেকেছেন। আমার মা আমাদের গর্ব। তিনি আমাদের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার কোনো তুলনা করা যায় না। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আমি একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছি, সমাজে পেয়েছি শিক্ষকের মর্যাদা। তিনি বলেন, আমার মায়ের চেষ্টায় ২০০০ সালে নিজ গ্রামের ছাতিয়ানগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমি এসএসসি পাস করি। পরবর্তীতে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর সরকারি মজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে এইসএসসি ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করি। এরপর ২০১৬ সালের জুনে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক পদে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই এবং নিয়োগ পাই। এখন আমি কুমারঢোল-চকসোনার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছি। বর্তমানে মা, স্ত্রী ও তিন মাস বয়সী এক ছেলেকে নিয়ে সুখেই আছি। আমার বোনেরাও তাদের সংসারে ভালো আছেন। সুদিন ফিরে পাওয়া লাজিনা বেওয়া বলেন, একসময় আর্থিক সংকটের কারণে বিধবা ভাতাকার্ড নিয়েছিলাম। ওই কার্ড আমার এখন প্রয়োজন নেই। যখন বিধবাভাতা তালিকাভুক্ত হয়েছিলাম তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই ‘যদি কখনো সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে, তাহলে কার্ডটি ফেরত দেবো। এখন আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় কার্ডটি ফেরত দিয়ে দিয়েছি। কষ্টের দিনে এমন সহযোগিতা পাওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওই নারী। ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সবাই যখন পেতেই ব্যস্ত তখন তিনি তার কার্ডটি ফেরত দিয়েছেন। এটি সত্যিই আশ্চর্যজনক ঘটনা। এ ইউনিয়নে আগে এভাবে কেউ কার্ড ফেরত দেয়নি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দীন মোবাইলফোনে বলেন, এমন মানুষ বিরল। এ উপজেলায় এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বিধবা ওই নারীর এমন সিদ্ধান্ত খুব ভালো লেগেছে। তার হিসাব বন্ধের জন্য ছেলে মামানুর রশিদ মামুন লিখিত আবেদন করেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে ওই হিসাব বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। তার এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।