আজকের দিন তারিখ ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় সংশোধনের পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন জরুরি

সংশোধনের পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন জরুরি


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ১০, ২০২০ , ৩:০৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


দেশব্যাপী যে হারে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে, এ কোন বর্বরতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি? বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। শুধু ধর্ষণ নয়, একই সঙ্গে ধর্ষণ ও হত্যার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে এরই মধ্যে। এমতাবস্থায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বদলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের একটি প্রস্তাব আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকে যাচ্ছে। মূলত আইনের ৯(১) ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। তবে শুধু আইন করে বা বিদ্যমান আইনের সংশোধন করেই অপরাধ কমানো যাবে না, আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাশপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছিল। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের একটি কক্ষের সামনে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনা জানাজানির পর ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আন্দোলনকারীরা ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি জানিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার ধর্ষণ রোধে আইন পরিবর্তনের কথা ভাবছে। বিশেষ করে নিরীহ মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়েও সর্বোচ্চ বিচার পাচ্ছে না। ফলে দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি উঠেছে। আমাদের মনে হয় এটা যৌক্তিক দাবি। অর্থবিত্ত বা সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদদপুষ্টরাই ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এ রকম অভিযোগ অজস্র। স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাসহ সমাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেও এ রকম অপরাধের হার বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সিলেট ও নোয়াখালীর ঘটনায় ধর্ষকরা মাদকাসক্ত ছিল বলে খবরে প্রকাশ। আমরা চাই সাম্প্রতিক সময় ধর্ষণের ঘটনার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। পাশাপাশি নতুন আইন দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। এটাও মনে রাখতে হবে, আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে না হলে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। এজন্য মামলার তদন্তে কালক্ষেপণ বন্ধ করতে হবে। ভিকটিম ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।