আজকের দিন তারিখ ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় শেবাচিমের প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরেও ঘোঁচেনি চিকিৎসক সংকট, ভোগান্তিতে রোগীরা

শেবাচিমের প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরেও ঘোঁচেনি চিকিৎসক সংকট, ভোগান্তিতে রোগীরা


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ , ৭:০১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


বরিশাল  প্রতিনিধি : দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম) প্রতিষ্ঠার প্রায়
৫৫ বছর পার হলেও চিকিৎসক সঙ্কট ঘোচাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ৫শ’ শয্যার চিকিৎসক দিয়ে ১ হাজার বেডে প্রায় ২৫শ’ রোগীর চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলছে। ধারণ ক্ষমতার তিনগুণের বেশি রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। ফলে চিকিৎসক সঙ্কটে প্রতিনিয়ত রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে রোগীর স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিদিনই ঘটছে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসক সঙ্কটের
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার জানানো হয়েছে। হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর চাপ এত বেশি যে ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। ওয়ার্ডে শয্যা সংকুলান না হওয়ায় হাঁটার জায়গায় রোগীর বিছানা করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ভোগান্তি আর চরম চিকিৎসক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে
চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন এ অঞ্চলের রোগীরা। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স নিপা আক্তার বলেন, ওয়ার্ডে মোট ৭২ টি বেড রয়েছে। সেখানে ৭২ বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২২০ থেকে ২৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসক, ইন্টার্ন ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ঝালকাঠির শাফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, ভালো চিকিৎসার আশায় ঝালকাঠি থেকে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হইছি, কিন্তু চার দিন পার হলেও বড় ডাক্তারের দেখা পাইছি এক দিন। এছাড়া সব সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আইসা দেখে। একই অভিযোগ আমতলী থেকে গাইনী সমস্যায় চিকিৎসা নিতে আসা মিনারা বেগমের। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার ছাড়া কোনো বড় ডাক্তার আসেনি দেখতে। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর চাপ দ্বিগুণ থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে হাজারের বেশি রোগী। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ২৫০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। পরে হাসপাতালটিকে ৫শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সবশেষ ২০১৩ সালে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি সেই পরিমাণ চিকিৎসক। বর্তমানে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের কার্যক্রম নতুন ভবনে চালু করা হলেও বাড়ানো হয়নি চিকিৎসক। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠাকালীন ২২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পরে এসেও সেই জনবলের পূর্ণতা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতাল সূত্র অনুযায়ী পরিচালক, উপ-পরিচালক, আবাসিক চিকিৎসক, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ ২২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও সেই পদের বিপরীতে সবশেষ তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১৮২ জন। ৪২ জন চিকিৎসকের পদ এখনও শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, হাজার শয্যার
বিপরীতে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার রোগী চিকিৎসা নেয়। গত ২২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২১৫৬ জন। এর আগে ২১ জানুয়ারি ভর্তি ছিল ২১২৩ জন। যা শীতের সময় কিছুটা কম থাকলেও গরমে আরও বেড়ে যায়। এতো রোগীর বিপরীতে মাত্র ১৮২ জন চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ২৩ জানুয়ারী হাসপাতালের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী (৫০০ শয্যার জন্য) চিকিৎসকদের ৪২টি পদই শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে উপ-পরিচালকের একটি পদের একটিই শূন্য রয়েছে। ডেন্টালের জুনিয়র কনস্যালটেন্টের একটি পদের মধ্যে একটি শূন্য রয়েছে। আবাসিক সার্জন ৮টি মধ্যে ১টি পদ
খালি রয়েছে। রেজিস্ট্রার ৩৩টি পদের মধ্যে ২১ জন থাকলেও ১২টি পদ এখনও শূন্য রয়েছে। সহকারী রেজিস্ট্রার ৬৬টি পদের মধ্যে ৪৫ জন থাকলেও শূন্য রয়েছে ২১টি পদ। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) ১০টি পদের মধ্যে ৯ জন থাকলেও ১টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল অফিসার (বহিঃ) বিভাগ, এমও সহকারী সার্জন, এম ওবিটিসি, এমও রেডিওলজিস্ট, এমও স্বতন্ত্র, রক্তরোগ, এমও রেডিওথেরাপিস্ট, ডেন্টাল সার্জন ৪৬টি পদের মধ্যে ৪৪ জন থাকলেও এখনও
শূন্য রয়েছে ২টি পদ। চারটি ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য রয়েছে। ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা (আইএমও) ২০টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য রয়েছে। চিকিৎসকের ৪২টি শূন্য পদের ভোগান্তির চিত্র চোখে পড়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই রোগী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ডাক্তার আসেনি। দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে তীব্র চিকিৎসক সঙ্কট চলছে জানিয়েছে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম, হাসপাতালে যে পরিমাণ চিকিৎসক রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ৫ শয্যার হাসপাতালকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়ানো হয়নি চিকিৎসক। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে ৫শ’ রোগীর। সেখানেও ২২৪টি পদের বিপরীতে ৪২ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। অথচ ১ হাজার বেডের হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ২৫শ’ রোগী। হিসাব অনুযায়ী হাসপাতালে প্রায় ৩শ’ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সব উপজেলার রোগীই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে অনেক সময় চাপ সামলাতে না পেরে
রোগী রেফার করে ঢাকায় প্রেরণ করি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশা দিয়েছেন।