আজকের দিন তারিখ ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ধর্ম ও জীবন রমজান মাসে কী করা যাবে, কী যাবে না

রমজান মাসে কী করা যাবে, কী যাবে না


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৩, ২০২২ , ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: ধর্ম ও জীবন


দেলোয়ার হোসাইন : রমজান সংযমের মাস। মহান আল্লাহতায়ালা এ মাসে অশেষ ক্ষমা ও পুরস্কারপ্রাপ্তির মহিমান্বিত মুহূর্তগুলো রেখেছেন। মুসলিম জাতির জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে এ মাসে রয়েছে অত্যন্ত কল্যাণ ও বরকত। আমি,আপনি ভাগ্যবান জীবনে আরও একটি রমজান পেয়েছি। তাই রমজানকে স্মরণীয় করে রাখতে কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ মাসের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।

রমজান মাসে যা করব

১.সাওম পালন: ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে অন্যতম একটি ভিত্তি হলো সাত্তম। প্রতিবছর রমজান মাসে একজন সুস্থ সক্ষম মানুষের জন্য সাওম পালন করা ফরজ।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।’(সুরা বাকারা: ১৮৩)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা রমজানের চাঁদ দেখবে তখন রোজা রাখবে। যখন শাওয়ালের চাঁদ দেখবে তখন থেকে রোজা বন্ধ করবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ দিন রোজা রাখবে।’ (বুখারি: ১৯০৯)

২.তারাবির নামাজ আদায়: রমজান মাস অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ একটি মাস। এজন্য এ মাসে দিন-রাত উভয়ই ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে। শরীয়ত মতে, দিনে সাত্তম পালন করা ফরজ আর রাতে তারাবির সালাত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি আদায় করে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি: ২০০৯)

৩. সেহরি খাওয়া: সুবহে সাদেকের কাছাকাছি সময়ে রোজ পালনের প্রস্তুতি হিসেবে সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব। সেহরিতে রয়েছে অনেক বরকত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও। কেননা সেহরিতে রয়েছে বরকত। (মুসলিম: ১০৯৫)

৪. ইফতার করা: সারাদিন মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে সাওম পালনের পর সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নত। ইফতার খেজুর দ্বারা করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর তাও না পেলে এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।’ (সুনামে তিরমিজি: ৬৯২)

৫. কুরআন পড়া ও বুঝা: রমজান মাসে আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন মানবজাতির হেদায়াতের জন্য নাজিল করেছেন। এ কিতাবে রয়েছে হেদায়েতের বাণী।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব, আমি তাকে খাদ্য এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি, অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬২৬)

৬. তওবা-ইস্তিগফার করা: আল্লাহতায়ালা রমজান মাসে অসংখ্যক জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ এ মাসের প্রতিরাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৮৭৯৪)

৭. ইতেকাফ করা: রমজানের শেষ দশকে আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য হাজার বছরের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত্রি লাইলাতুল কদর রেখেছেন। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি এই নিয়ম পালন করেন। ’(বুখারি)

৮. নফল ইবাদত করা: রমজান মাসে নফল ইবাদতের সওয়াব অন্য মাসের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করা উচিত। এ মাসে রোজাদারকে ইফতার করা, দান-সদকা করা, বিশ্ব মুসলিম জাতির দোয়া করা উচিত।

রমজান মাসে যা করব না

১. অপ্রয়োজনীয় কথা বার্তা না বলা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কত রোজা পালনকারী এমন আছে, (রোজা অবস্থায় অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকে বিরত না থাকার ফলে) ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া রোজা থেকে সে আর কিছু লাভ করতে পারে না। অনুরূপ অনেক রাত জাগরণকারী এমন আছে যে তার রাত্রিজাগরণ থেকে জেগে থাকার কষ্ট ছাড়া আর কিছু পায় না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৯০)

২. মিথ্যা কথা না বলা: মিথ্যাকে সব পাপের জননী বলা হয়। একটি মিথ্যা থেকে শতশত পাপের সূত্রপাত হয়। তাই আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.) মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে রোজা রেখেছে অথচ মিথ্যাচার পরিহার করেনি, তার এই কৃত্রিম পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই। (বুখারি: ১৯০৩)

৩. গীবত থেকে বিরত থাকা: গীবত আমল ধ্বংসের নিরব ঘাতক। গীবতের কারণে কখন যে আপনার আমল ধ্বংস হয়ে যাবে তা বুঝতেই পারবেন না। গীবত জিনার চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। তাই গীবত পরিহার উচিত। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে মাহে রমজানের অশেষ রহমত, বরকত হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।