আজকের দিন তারিখ ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// মৃত্যু-শনাক্তের হার নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

মৃত্যু-শনাক্তের হার নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ৯, ২০২১ , ১২:২১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে ডেস্ক :   দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এক বছর শেষ হলো। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। গত বছর ভাইরাসটিতে মৃত্যু-শনাক্তের সংখ্যা বেশির দিকে থাকলেও নতুন বছরে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে কয়েকদিন ধরে ফের করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ সোমবার ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ১৩ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া এদিন গত ৫৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এসময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৮৪৫ জনের। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারির পর থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিন্মগামী ছিলো। এই হার ৩ শতাংশেরও কমে নেমে এসেছিলো। তবে পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় গত কয়েক দিন ধরেই রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে। গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিলো ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। শনিবার এই হার ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং শুক্রবার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিলো ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেকটাই বিপরীতধর্মী আচরণ করছে এই মারণ ভাইরাসটি। শীত মৌসুমে বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও পুরো উল্টো চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশে। তবে গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা বাড়ায় সংক্রমণ বাড়ছে। যা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে।

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য মতে, নতুন করে ভাইরাসটি থেকে মুক্ত হয়েছেন এক হাজার ১১৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ চার হাজার ১২০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১০ জন এবং নারী চার জন। এর মধ্যে সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মোট মারা যাওয়া আট হাজার ৪৭৬ জনের মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৪০৭ জন বাকি দুই হাজার ৬৯ জন নারী। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে আট জন ষাটোর্ধ্ব, চার জন পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের ও দুই জন চল্লিশোর্ধ্ব রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৮টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৯টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৭২টি র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে অর্থাৎ সর্বমোট ২১৯টি ল্যাবে ১৬ হাজার ৯৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪১ লাখ ৬৩ হাজার ১৬৩টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এদিকে দেশে সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিলো। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিলো। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে। তবে তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী।

অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্তের পর এই সংখ্যা এক লাখের ঘরে পৌঁছায় ১৮ জুন। ২৬ আগস্ট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়ায় ৩ লাখ। ২৬ অক্টোবর এ সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর শনাক্ত রোগী সংখ্যা পরবর্তী এক লাখ ছাড়িয়ে যায় ৫৫ দিন পর গত ২০ ডিসেম্বর। এরপর নানা কারণে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। ৭৭ দিনে শনাক্ত রোগীর তালিকায় ৫০ হাজার জন। এর মধ্যে গত ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।

অন্যদিকে ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু হবার তথ্য জানানোর এক মাস পর ২০ এপ্রিল শতকের ঘরে পৌঁছায় মৃতের সংখ্যা। এ সংখ্যা ৫’শ ছাড়ায় গত ২৫ মে। এরপর ১০ জুন মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ৮৫ দিন পর ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। পরে কম সময়ের ব্যবধানে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ আগস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার, ২৬ নভেম্বর তা সাড়ে ছয় হাজার এবং ২৯ ডিসেম্বর তা সাড়ে সাত হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। আর মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। ২০২০ সালের ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

এদিকে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এদিন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৫১ হাজার ১৭৫ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ৮ হাজার ৪৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪ হাজার ১২০ জন। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি গতকালের চেয়ে বেশি ৮৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে দেশে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অতিমারির কারণে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ৩০ মার্চ দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করতে নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের টিকাদান ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।

এছাড়াও দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে পরিকল্পনা ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তার বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশে গতবছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।