আজকের দিন তারিখ ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় মৃত্যু পরোয়ানা শুনলেন মীর কাসেম

মৃত্যু পরোয়ানা শুনলেন মীর কাসেম


পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৭, ২০১৬ , ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


Mir-kকাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৭ জুন) সকালে গাজীপুরে কাশিমপুর কারাগারে তাকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়।

কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মীর কাসেম আলী আদালতে পুনরায় আবেদন (রিভিউ) করবেন।

এর আগে সোমবার (০৬ জুন) রাতে তার মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়।

রাত পৌনে আটটার দিকে মৃত্যু পরোয়ানা ও মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি গ্রহণ করেছেন বলে জানান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও জেলার নেসার আলম। তারা জানান, মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কারাগারে আছেন। সেখানে পাঠানো হবে মৃত্যু পরোয়ানা।

কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মীর কাসেম আমাদের কারাগারে আছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মৃত্যু পরোয়ানা এসে পৌঁছালে তাকে পড়ে শোনানো হবে।

রাত সাড়ে সাতটার দিকে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা ও মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি নিয়ে কারাগারের উদ্দেশে রওনা হন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা পারভেজ হোসেন।

রাত সাতটার দিকে মীর কাসেমের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক এবং বিচারিক প্যানেলের দুই সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।

দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিসহ অন্য কাগজপত্র। এর ভিত্তিতে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে তাতে স্বাক্ষর করেন ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল মামলার রায় প্রদানকারী পাঁচ বিচারপতি রায়ে স্বাক্ষরের পর তা প্রকাশিত হয় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে। অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, কারাগারে যাওয়ার পর মীর কাসেম আলীকে রায় ও মৃত্যু পরোয়ানা অবগত করা হবে। অবগত হওয়ার পর থেকে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানানোর জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন তিনি। এ আবেদন জানালে এর নিষ্পত্তিতে শেষ হবে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া।

তবে আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন না করলে আইন অনুসারে দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার।

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, রিভিউ হলে রায়ের কার্যকারিতা ও মৃত্যু পরোয়ানা স্থগিত থাকবে। রিভিউ খারিজ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া ফের শুরু হবে। সেক্ষেত্রে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন আসামি। প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে কিংবা আবেদন করার পর নাকচ হয়ে গেলে চূড়ান্তভাবে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

অন্যদিকে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

গত ০৮ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া ফাঁসি বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। ২০১৪ সালের ০২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের ওই রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায় (১১ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে আপিল মামলার রায়ে।

১১ নম্বর ছাড়াও ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার দায়েও কাসেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে চূড়ান্ত রায়ে প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত মোট ১০টি অভিযোগের মধ্যে আরও ৬টি অভিযোগে মীর কাসেমের সাজা বহাল এবং আরও ২টি থেকে অব্যাহতি ও খালাস দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির পাশাপাশি ৫৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন তিনি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা ছিলেন জামায়াতের বর্তমান কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী। সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) ও জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ (যৌথ দায়বদ্ধতা) হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনী ও ছাত্রসংঘের অপরাধের দায়ও তাই বর্তেছে তার ওপরে।

ট্রাইব্যুনালে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মীর কাসেম আলী।

এ ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে। বাকি ৪টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি প্রসিকিউশন।

১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অর্থাৎ ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ৪টি অর্থাৎ ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়।

এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে সর্বসম্মত ও ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা।

ফাঁসি ছাড়াও প্রমাণিত অন্য ৮টি অভিযোগে আরও ৭২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পান মীর কাসেম আলী। এর মধ্যে প্রমাণিত ফারুককে অপহরণ-নির্যাতনে (২ নম্বর অভিযোগ) ২০ বছর ও নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতনের (১৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড পান তিনি। এছাড়া অপহরণ, আটক ও নির্যাতন সংক্রান্ত ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

অভিযোগগুলোর মধ্যে ৪, ৬ ও ১১ নম্বর বাদে বাকি ৭টিতেই সাজা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে ৭ বছর করে ১৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ কমেছে মীর কাসেমের।