আজকের দিন তারিখ ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ মায়ের বান্ধবীর বাড়িতে বর্বর নির্যাতনের শিকার আমেনা

মায়ের বান্ধবীর বাড়িতে বর্বর নির্যাতনের শিকার আমেনা


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৮, ২০২১ , ২:২৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


যশোর প্রতিনিধি : কিশোরী আমেনা খাতুনের (১১) পুরো শরীরেই গরম খুন্তির দগদগে ক্ষত। তার বুকের উপরে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। চুল টেনে ছিঁড়ে নেওয়া, মাথা ফুটো করে দেওয়ার বর্বরতা এইটুকুন শরীরে। বর্বরতার এমন চিহ্ন নিয়ে আমেনা এখন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের নূর ইসলাম ও আকলিমা খাতুনের মেয়ে আমেনা। দুই বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়। ৫ বছর পর নানী জোহরা খাতুন আকলিমাকে আবার বিয়ে দেন। আর বিধবা নানী জোহরা খাতুন ভিক্ষা করেই লালন পালন করতে থাকেন আমেনাকে।
আমেনার মা আকলিমা জানান, তার ছোটবেলার বান্ধবী শ্যামলী বৈরাগী গতবছর করোনার আগে তাকে অনুরোধ করে আমেনাকে তার সাথে দেওয়ার জন্য। শ্যামলীর দুটি সন্তানকে দেখাশোনা করার জন্য নিয়ে যায় আমেনাকে। তার থাকা খাওয়া মানুষ করার দায়িত্ব নেন শ্যামলী। সরল বিশ্বাসে বান্ধবীর হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন আকলিমা।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আমেনা জানায়, শ্যামলী আন্টি তাকে ঢাকার মহাখালীতে সাততলা সরকারি কোয়ার্টারে নিয়ে যায়। সেখানে শ্যামলী আন্টি, তার স্বামী বাদল সিকদার ও আন্টির শাশুড়ি লিলি থাকেন। আন্টির শাশুড়ি সরকারি হাসপাতালের নার্স। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর দু’মাস সে ভালো ছিল। এরপর থেকেই শুরু হয় নির্যাতন। বাড়ির কাজের একটু এদিক ওদিক হলেই তাকে বেধড়ক মারপিট করতো শ্যামলী ও বাদল।
আমেনার ভাষ্যমতে, বাসাবাড়ির সকল ধরনের কাজ তাকে করতে হতো। এর আগে আমেনা কোথাও কাজ করেনি বা শেখেনি। রুটি বানানো দিয়ে শুরু কাজ। রুটির পরিমান কম বলে আমেনাকে মারপিট করা হতো। হাত থেকে পিরিচ পড়ে গেলে সারা গায়ে গরম খুন্তির ছ্যাকা, হাত ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাত মচকে দেয়া, প্ল্যায়ার্স দিয়ে মাথার চুল টেনে টেনে উঠিয়ে নেয়া, গলায় এবং মাথায় আঘাত করা হতো নিয়মিত। দুই পায়ে পিটিয়ে ভেঙ্গেছে রুটি বানানো বেলন। শ্যামলীর স্বামী আমেনার পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে যন্ত্রণা দিয়েছে; শ্যামলী বুকের উপর দাঁড়িয়ে লাফালাফি করেছে।
অত্যাচার নির্যাতনের এসব কিছুই জানতে পারেনি আমেনার মা ও নানী। আকলিমা খাতুন জানান, ফোন করলেই বলতো আমেনা ভালো আছে। ফোনে লাউড দিয়ে কথা বলাতো। তারা কিছুই জানতে পারেনি। আমেনার নানী জোহরা খাতুন জানান, একমাস আগে তিনি আমেনা দেখতে ঢাকায় যায়। কিন্তু বাদল তাকে বাড়ি নেয়নি। তার কাকা তাকে মিরপুরের বাসায় নিয়ে গেছে। তাকে বলেছে, শ্যামলী বাদল বরিশালে বেড়াতে গেছে। আমেনাকে সাথে নিয়ে গেছে।
যশোরে ফিরে জোহরা খাতুন ফোন করে আমেনার জন্য কান্নাকাটি করে। একপর্যায়ে এক সপ্তাহ আগে আমেনাকে নিয়ে আসার জন্য তার মা আকলিমাকে ফোন করে শ্যামলী। এরপর গত ২৩ মে তার নানী ঢাকায় গিয়ে আমেনাকে নিয়ে আসেন। এরপর ২৫ মে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আমেনার মা আকলিমা বলেন, মেয়েটাকে শ্যামলীর কাছে দিয়েছিলাম ভালো থাকবে বলে। কিন্তু তার এই অবস্থা করবে ভাবতেই পারিনি। আমি আমার মেয়ে নির্যাতনের বিচার চাই।
হাসপাতালে আমেনাকে চিকিৎসা দেওয়া যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অজয় কুমার সরকার জানান, তার শরীরে অসংখ্য পোড়া বা ছ্যাকার দাগ ও নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষত শুকিয়ে গেছে। অনেকদিন ধরেই এই ক্ষতগুলো হয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, অভিযোগ তিনি শুনেছেন। ভুক্তভোগীদের থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর ডিএমপির সংশ্লিষ্ট থানার সাথে যোগাযোগ করে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।