আজকের দিন তারিখ ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় অপরাধীদের ছাড় নয়

দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় অপরাধীদের ছাড় নয়


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১১, ২০২০ , ২:৩৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে আজ ভাবমূর্তির সংকটে দেশ। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে গিয়ে পজিটিভ হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। মিথ্যা তথ্যে বিদেশ গমনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে অন্যান্য আকাশ পথও। এমতাবস্থায় লাখ লাখ প্রবাসীর অবিশ্বাস আর অনিশ্চয়তার আঁধারে পড়ছে। ভুয়া সাটিফিকের্টের কারণে প্রাবাসীদের জীবনে এই অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। করোনার মোকাবিলায় পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে শৈথিল্য তার প্রমাণ হচ্ছে এটি। এমন ঘটনা দেশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করছে। এটির সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেশের ওপর পড়বে। জানা গেছে, ইতালির সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হওয়ার পর গত দুই সপ্তাহে হাজারখানেক বাংলাদেশি বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ইতালি ফিরে গেছে। কিন্তু বুধবার কাতার এয়ারওয়েজে ইতালি যাওয়া ১৬৮ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীকে দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। গত ৬ জুন থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি এই দুটি রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা ছিল। এজন্য টিকেট বিক্রির কার্যক্রমও শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু আরব আমিরাত সিভিল অ্যাভিয়েশনের সিদ্ধান্তের কারণে এই দুটি রুটে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়েও চার বাংলাদেশির শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চার্টার্ড ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাপান। অন্যদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সব দেশের সঙ্গে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও তা চালু ছিল চীনের সঙ্গে। কিন্তু ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংজু শহরগামী একটি ফ্লাইটে ১৭ জন করোনা রোগী পাওয়ার পর চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের বাংলাদেশ-গুয়াংজু রুটে বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বেইজিং। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে এটা দেশের অর্থনীতি খাতের চরম দুর্দশা নেমে আসবে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র বেরিয়ে এসেছে। একদিকে যেমন মহামারি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্য খাত, সেই সঙ্গে এর নানা দুর্বলতার বিষয়টিও সামনে এসেছে। সরকারি স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশার কারণে দেশে গড়ে উঠেছে বেসরকারি বিশাল একটি চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা। যেখানে চিকিৎসাসেবা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার লাভের পর থেকেই অনিয়মগুলো সামনে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে মাস্ককাণ্ড। এন৯৫ মাস্কের কথা বলে কেনা হয়েছে নিম্নমানের মাস্ক, সেগুলো সরবরাহের পর প্রশ্ন উঠলে কিছু হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির একটি শক্তিশালী দুষ্ট বলয় তৈরি হয়েছে। সিন্ডিকেটটি এত শক্তিশালী ভুয়া সাটিফিকের্ট দিয়ে প্রবাসীদের হয়রানিতে ফেলছে। বিশেষ করে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ কর্মকাণ্ডে সরকারও বেকায়দায় পড়ছে। এছাড়া জেকেএস কোনো নমুনা পরীক্ষা না করেই নেগেটিভ/পজিটিভ রেজাল্ট দিয়েছে। এমন অব্যবস্থাপনার জন্য আজ প্রবাসীদের ভোগতে হচ্ছে। নানা সূচকে দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হলেও এই অগ্রযাত্রার পথে এখনো বড় প্রতিবন্ধক হয়ে আছে অনিয়ম-দুর্নীতি। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে, যদি দুর্নীতির এই মচ্ছব বন্ধ করা না যায়। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ করোনা কীভাবে সামাল দেয়া যাবে, তা নিয়ে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব চিন্তিত। এমতাবস্থায় কিছু মানুষের জন্য দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা কোনোভাবেই যেন বরদাশত করা না হয়।