আজকের দিন তারিখ ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাবিশ্ব ছেলে দেখভাল না করলে তাড়িয়ে দিতে বাধা নেই

ছেলে দেখভাল না করলে তাড়িয়ে দিতে বাধা নেই


পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১০, ২০১৬ , ৩:৪১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব


law1465550425অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সন্তান বড় হয়ে যখন বাবা-মায়ের চিকিৎসাতো দূরের কথা উল্টো যখন প্রাণনাশের হুমকি দেয় তখন আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর উপায় কী? ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ এক বাবা সেই কাজটিই করেছেন। কলকাতা হাইকোর্ট মামলার রায়ে বলেছেন, সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও ছেলে যদি বৃদ্ধ বাবাকে না-দেখে, তাঁর চিকিৎসা না-করায়, তাকে সোজা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে বাধা নেই। বিশেষ করে যে-ছেলে বাবাকে হত্যার হুমকি দেয়, তাকে কোনও মতেই বাড়িতে ঠাঁই দেওয়া যায় না।

বৃহস্পতিবার জগদ্দল থানা এলাকার একটি মামলায় হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, স্বনির্ভর, সমর্থ কোনও ছেলে যদি সত্তোরোর্ধ্ব বাবার চিকিৎসা না-করায়, তা হলে বাবার বাড়িতে তার থাকার অধিকার থাকতে পারে না। বাবা চাইলে ছেলেকে বাড়ি থেকে বার করে দিতেই পারেন। ছেলে অন্যত্র বাড়ি ভাড়া করে থাকতে পারে।

এই পর্যবেক্ষণের পরে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ছেলেকে নির্দেশে দিয়েছেন, বাবার হৃদ্‌যন্ত্রের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, কোন হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, ১৩ জুন অর্থাৎ সোমবারের মধ্যে আদালতে হলফনামা দিয়ে তা জানাতে হবে।

জগদ্দল থানা এলাকার শ্যামনগর গুড়দহ-শালবাগানের বাসিন্দা বিমলচন্দ্র পাল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্মী ছিলেন। তাঁর আইনজীবী সন্তোষকুমার চক্রবর্তী ও স্বপনকুমার মিত্র জানান, ২০০৩ সালে বিমলবাবু অবসর নেন। পেনশন পান সামান্য টাকা। গুড়দহে তাঁর তিন কাঠা ১৪ ছটাক জমি ছিল। তার মধ্যে দু’কাঠা চার ছটাক জমিতে তিনি একতলা বাড়ি তুলেছেন। বাকি জমি খালি পড়ে আছে। অবসরকালীন পাওনার বেশির ভাগ টাকা খরচ করে তিনি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, ছেলে বিকাশ ও পুত্রবধূ। বিকাশ মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেন।বিমলবাবু সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি নিজেই এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। চিকিৎসক তাকে জানান, খুব দ্রুত তাঁর হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। অস্ত্রোপচারের খরচ দুই লাখ টাকা। সেই টাকা সংগ্রহের জন্য বাড়ির লাগোয়া এক কাঠা ১০ ছটাক জমি বিক্রি করতে চান ওই বৃদ্ধ। ক্রেতাও পেয়ে যান।

কিন্তু বিমলবাবুর ছেলে বিকাশ এবং বিকাশের শ্বশুর, ঝাউতলা উকিলবাগানের বাসিন্দা প্রদীপ দে বাদ সাধেন । বাবা জমি বিক্রি করতে চাইছেন জেনে ছেলে তার ওপর মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। তাতে ইন্ধন জোগান ছেলের শ্বশুর। হুমকি দেওয়া হয়, জমি বিক্রি করলে বিমলবাবুকে মেরে ফেলা হবে। হুমকির পরেই গত ১৯ অক্টোবর জগদ্দল থানায় ছেলে এবং ছেলের শ্বশুরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন বিমলবাবু।

আদালতে বৃদ্ধের অভিযোগ, জেনারেল ডায়েরি করার পরেও পুলিশ হত্যা-হুমকির কোনও তদন্ত করেনি। ছেলে ও ছেলের শ্বশুরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে আইনি ব্যবস্থা নেয়নি তারা। এমনকী নিজের চিকিৎসার জন্য তিনি যাতে জমি বেচতে পারেন, সেই ব্যাপারে তাকে কোনও সাহায্যও করেনি।

শুনানিতে বিচারপতি দত্ত জানান, বেয়াড়া ছেলেকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া যেতেই পারে। তার পরে বিকাশের আইনজীবীকে বিচারপতি নির্দেশ দেন, চারদিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানানো হোক, বাবার অস্ত্রোপচারের জন্য ছেলে কোন হাসপাতালে কী বন্দোবস্ত করেছেন।