আজকের দিন তারিখ ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় ছেলেকে বাঁচাতে আইসিইউ ছেড়ে মারা গেলেন মা

ছেলেকে বাঁচাতে আইসিইউ ছেড়ে মারা গেলেন মা


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৯, ২০২১ , ১২:৫৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : শ্বাস নিতে পারছে না ছেলে। মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে শুয়ে থাকা মায়ের কানে খবরটা যেতেই ছটফট শুরু করে দেন। কিন্তু প্রয়োজন থাকলেও শয্যা খালি না থাকায় ছেলেকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। ছেলের ছটফটের কথা শুনে নিজের হাতে লাইফ সাপোর্টের সরঞ্জাম খুলে ছেলেকে আইসিইউতে আনতে চিকিৎসকদের ইশারা করেন তিনি। যেন প্রিয় সন্তান বেঁচে থাকে। শত চেষ্টা করেও মাকে বুঝাতে পারেননি চিকিৎসকরা। তখন এক প্রকার বাধ্য হয়ে মাকে নামিয়ে আইসিইউ বেডে তোলা হয় ছেলেকে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আইসিইউ থেকে নামার এক ঘণ্টার মাথায় পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে করোনার কাছে হার মানে মা। ছেলে বেঁচে আছেন। তবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বুধবার রাতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ঘটে এমন ঘটনা।

জানা যায়, নগরের কোতোয়ালী থানার দিদার মার্কেট সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকার বাসিন্দা মা কানন প্রভা পাল (৬৫) গত ১৫ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এরমধ্যে অবস্থার অবনতি হলে গত ২২ জুলাই তাকে আইসিইউতে আনা হয়। অন্যদিকে ২১ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি হন ছেলে শিমুল পাল(৩৮)। এর মধ্যে বুধবার সকাল থেকে ছেলে শিমুলের তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কমতে থাকে অক্সিজেন লেভেল। পরে মায়ের ছেড়ে দেওয়া আইসিইউর বেডেই এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন শিমুল পাল।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোভিড ফোকাল পার্সন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুর রব বলেন, মায়ের অসাধারণ ত্যাগের কারণে ছেলে এখনো বেঁচে আছে। তবে মা কানন প্রভা পাল যেটা করেছেন তাতে আমাদের সায় ছিল না। এরপরও উনার জোরাজুরিতেই আমরা নিরুপায় হয়ে তাকে আইসিইউ বেড থেকে নামিয়েছি। নামানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি মারা যান। মায়ের ছেড়ে দেওয়া সিটে ছেলে শিমুল পাল এখন আছেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এদিকে চট্টগ্রামে মাত্র একদিনের ব্যবধানেই নতুন করে করোনায় শনাক্তের রেকর্ড গড়েছে। একইসঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে করোনা রোগীর মৃত্যু মিছিলও। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আরো ১ হাজার ৩১৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ৮৫৮ জন নগরের ও ৪৫৭ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৯ হাজার ৭৫১ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ হাজার ৮২২ জন নগরের বাসিন্দা ও ১৯ হাজার ৯২৯ জন বিভিন্ন উপজেলার। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের ৮ জন নগরের বাকি ৯ জন উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৯৪৯ জনে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা আগে থেকেই সকলকে সতর্ক করে আসছি। কিন্তু মানুষ কোন কথাই শুনতে চায়নি। সরকারি বলেন আর বেসরকারি, সবগুলো হাসপাতালেই রোগীর প্রচুর চাপ বেড়েছে। এখন যেভাবে প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়ছে। তাতে সামনের পরিস্থিতি কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না। আমরা বরাবরই ঝুঁকির মধ্যেই আছি। এরপরও যদি সাধারণ মানুষ সচেতন না হয়, তাহলে কিছুই করার থাকবে না।