আজকের দিন তারিখ ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় বন্যা ও নদীতীর ভাঙন মোকাবিলা প্রসঙ্গে

বন্যা ও নদীতীর ভাঙন মোকাবিলা প্রসঙ্গে


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৩, ২০২১ , ১:৩৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে হাল্কা থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে নদীতীর ভাঙনে দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোনো কোনো নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই এসব এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ মাসের মধ্যভাগে বন্যা হতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য শঙ্কার ব্যাপার বৈকি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারি বর্ষণ হচ্ছে এবং নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় দুই সপ্তাহ ধরে তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীর পানি উপচে বন্যার পদধ্বনি কেবল নয়, এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য দুর্ভাবনার। সামনে ভয়াবহ বন্যার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা আমলে নিয়েই সরকারের এখন থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের সাধ্যাধীন নয়। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে নদীতীর ভাঙন। পানি বেড়ে যাওয়ায় তা নদীর ক‚ল উপচে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। এতে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এক গবেষণা রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। গত চার দশকে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীতে দেড় লাখ হেক্টর জমি হারিয়ে গেছে। আর চর জেগে উঠেছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি। সেই হিসাবে বাংলাদেশ নদীতে ১ লাখ হেক্টর জমি হারিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানোর উপায় নেই। আমাদের দেশের মানুষ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে আছে। আমরা দেখি, প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয় ভাঙন রোধে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার নামে ব্যয় হয়েছে, সেই হিসাব পাওয়া কঠিন। সেই অর্থ কতটা কাজে আসে, সেটা আরেকটি প্রশ্ন। কারণ ভাঙন রোধে নদীতীরে যেসব প্রকৌশল স্থাপনা তৈরি করা হয়, সেগুলোর গুণগতমান, কৌশল নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই। বছর বছর ভেঙে যাওয়া নদীতীর রক্ষা বাঁধগুলোর সংস্কার করা কিংবা স্থায়ীভাবে বাঁধের কাজ না করায় তাদের এই চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। বন্যার সময় বাঁধ একটা বড় আশ্রয়স্থল। যেভাবে বাঁধ ভাঙছে, তাতে সব বাঁধকে এখন নিরাপদ আশ্রয় মনে করা যাচ্ছে না। তারপর রয়েছে খাদ্য সংকট। সরকার ও প্রশাসন এ বিষয়ে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেÑ এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।