আজকের দিন তারিখ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় বঙ্গবন্ধুর চার খুনি : খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হোক

বঙ্গবন্ধুর চার খুনি : খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হোক


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৪, ২০২১ , ১২:০৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার খুনির মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চার খুনি হলেন- শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এ বি এম এইচ নূর চৌধুরীর। এরা অপরাধী, খুনি এবং কোনো সম্মানজনক পদ, পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারে না। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত চার পলাতক খুনির খেতাব স্থগিতের জন্য হাইকোর্ট একটি আদেশ দিয়েছিলেন গত বছরের শেষ দিকে। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে জামুকার বৈঠকে চারজনের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশ ত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের কারণে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের বীরউত্তম খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল জামুকার ওই সভায়। এমন সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৩৪ বছর পর গত ২০১০ সালে প্রত্যক্ষ ঘাতকদের কয়েকজনের ফাঁসি হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও জাতির গ্লানিমুক্তি ঘটেছে। তবে এখনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন ঘাতক বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। সেসব কিন্তু আজো উন্মোচিত হয়নি, শনাক্ত হয়নি হত্যার ষড়যন্ত্রকারীরা, নেপথ্য নায়করা। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক স্বদেশ গড়ার যে লক্ষ্য ও আদর্শকে সামনে রেখে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সেই স্বপ্ন-সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেশকে আবার সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানের পথে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নিয়েই ঘটানো হয়েছিল ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি। ঘাতকদের লক্ষ্য ছিল শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করাই নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশটাকেই ধ্বংস করে দেয়া। তাই তো ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩ নভেম্বর কারা অভ্যন্তরে হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর চার জাতীয় নেতাকেও। ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তির প্রতিশোধ গ্রহণের যে প্রক্রিয়া সে সময় অঙ্কুরিত হয়েছিল তারই একটি ভয়ংকর পরিণতি ঘটে ১৫ আগস্টে। স্বাধীন বাংলার স্থপতিকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা খুনিদের যাতে বিচার না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে। স্বঘোষিত খুনিরা পরবর্তী সময়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে থাকার সুযোগ পায়। এদের কেউ কেউ বিদেশি মিশনে চাকরি পেয়ে পুরস্কৃত হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে। এরপর বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালতের চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী ছয় খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তবে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পাঁচজন এখনো রয়েছেন পলাতক। তার মধ্যে নূর চৌধুরী বীরবিক্রম, শরীফুল হক ডালিম বীরউত্তম, রাশেদ চৌধুরী এবং মোসলেহ উদ্দিন খান বীরপ্রতীক খেতাবধারী। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ওই চারজনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব স্থগিতের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। খেতাব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা শুধু কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের কাজ নয়, এর নেপথ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কিছু তথ্য উঠে এসেছে দেশি-বিদেশি গবেষক-সাংবাদিকদের লেখায়। জোর দাবি উঠেছে একটি কমিশন গঠন করে এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার এবং চক্রান্তকারীদেরও বিচারাধীন করার। আমরা চাই সরকার এ লক্ষ্যে দ্রুত উদ্যোগ নিক।