আজকের দিন তারিখ ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন খাত স্থবির : কর্মহীন শ্রমিক-কর্মচারীরা

পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন খাত স্থবির : কর্মহীন শ্রমিক-কর্মচারীরা


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১, ২০২০ , ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি ঘোষণায় বন্ধ রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব পর্যটন স্পট। তাই অলস সময় পার করছেন এ খাতের সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। এ অবস্থায় ব্যবসা বন্ধ থাকায় অর্থাভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেন না হোটেল-মোটেল মালিকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯ মার্চ থেকে তিন পার্বত্য জেলার সব পর্যটন স্পট ও বিনোদনকেন্দ্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে তিন জেলার সব হোটেল-মোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়। এতে ১৯ মার্চ থেকে কার্যত বেকার হয়ে পড়েছেন পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা। মৌসুমের শেষ দিকে ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে তিন জেলায় যে পরিমাণ পর্যটকের ঢল নামে, এবার সেটাও করোনাভাইরাসের প্রভাবে শূন্যের কোটায়। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থানীয় পর্যটনশিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কয়েক কোটি টাকার। নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন শ্রমিক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন নিজেদের জীবনের শঙ্কার কথা। তারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে তারা বেকার জীবনযাপন করছেন। নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে তারা ঘরবন্দি হয়ে আছেন। ফুরিয়ে আসছে জমানো টাকাও। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভাইরাসে মরার আগে না খেয়েই মরতে হবে।  সম্প্রতি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন হোটেল- মোটেল, কটেজ ও পর্যটন স্পটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগ থেকেই হোটেল-মোটেল ও পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ রয়েছে। পর্যটনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির সব পর্যটন স্পট বন্ধ রয়েছে।এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউজ মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ১৯ মার্চ থেকে বান্দরবানের সব হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউজ বন্ধ রয়েছে। আমাদের সমিতিভুক্ত ৪৫টি হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউজ ছাড়াও জেলায় মোট ৬০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হোটেল-মোটেলে কাজ করা প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা বেকার হয়ে ঘরবন্দি জীবনযাপন করছেন। সব মিলিয়ে আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক। অনেক হোটেল মালিক এখনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারেননি। কিন্তু পেট তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কবে নাগাদ এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তা কেউ জানে না। এজন্য দুশ্চিন্তা আরো বাড়ছে।খাগড়াছড়ি জিপ সমিতির লাইনম্যান অরুণ কুমার দে জানান, ১৯ মার্চ থেকে খাগড়াছড়িতে চলাচলকারী সব জিপ ও পিকআপ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ জেলায় মোট ২০০টির মতো পর্যটনবাহী পিকআপ ও ২৫০টি জিপ রয়েছে। এসব পিকআপ ও জিপ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন দেড় থেকে দুই হাজার শ্রমিক। এখন করোনাভাইরাসের এ সংকটকালে সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন।খাগড়াছড়ি জেলা পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক একেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটন শিল্পে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের শ্রমিক-কর্মচারীরা কয়েকজন ছাড়া বাকিরা সবাই ছুটিতে আছেন। এ মহামারীতে দেশের পর্যটন শিল্পে কত বড় ধস হয়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাড়তি যোগ হয়েছে দুশ্চিন্তা। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। রাঙ্গামাটির সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সাজেকে এখন কোনো পর্যটন নেই। মৌসুমের এ শেষ সময় আমাদের মোটামুটি ভালোই ব্যবসা হতো। এ বছরও ২৬-২৮ মার্চ পর্যন্ত সাজেকের প্রায় সব কটেজ-রিসোর্টে ৬০-৭০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি পর্যটন বোট মালিক সমিতির সহসভাপতি ও পর্যটন বোটঘাটের ম্যানেজার মো. রমজান আলী জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই শতাধিক ইঞ্জিনচালিত ট্যুরিস্ট বোট অলস পড়ে আছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন চালক-মালিকরাও। ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিতে প্রচুর পর্যটক আসার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেটাও ভেস্তে গেছে। আমাদের হিসাবে প্রতিদিন যদি ৫০টি বোট ভাড়া হয়, তাতে ২-৩ লাখ টাকা ব্যবসা হয়। কিন্তু এখন বেকার বসে সময় পার করছি আমরা। ঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানিয়েছেন, মার্চের শুরু থেকে ৮-৯ মার্চ পর্যন্ত ১৩-১৪ লাখ টাকা ব্যবসা হয়েছে। ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে ৫০ লাখ টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা ছিল। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর অগ্রিম বুকিংও বাতিল হয়েছে। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় রাঙ্গামাটিতে সরকারিভাবে ১০০ টন খাদ্যশস্য ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আমরা উপজেলা পর্যায়েও এসব খাদ্যশস্য ও অর্থ প্রেরণ করেছি। সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে এসব খাদ্যশস্য ও অর্থ বিতরণ করা হবে।