আজকের দিন তারিখ ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ ঝিনাইদহে উদ্ধার করা টাকা হাওয়া, ফেঁসে গেলেন এসআই 

ঝিনাইদহে উদ্ধার করা টাকা হাওয়া, ফেঁসে গেলেন এসআই 


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ৫, ২০২১ , ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : আসামির কাছ থেকে উদ্ধার করা বিপুল অংকের টাকা জব্দ তালিকায় নেই। তদন্তকারীর অডিও কথোপকথন আদালতে জমা। ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই তৌহিদুল ইসলাম ফেঁসে গেছেন। তাকে সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জবাবও দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আসামিদের দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। জামিন পেয়েছেন এজাহারভুক্ত একজনসহ তিনজন।
অন্যদিকে আসামির কথিত স্ত্রীর সঙ্গে সেলফি তোলার অপরাধে পিবিআইয়ের কনস্টেবল মুক্তার হোসেনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে বিভাগীয় মামলা। বিদেশে পালিয়ে গেছে প্রতারক চক্রের প্রধান।
ব্রিটিশ আমলের কয়েন, মূল্যবান ধাতব, সীমান্ত পিলার, কষ্টিপাথরের মূর্তি বিক্রেতা চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটকের ঘটনা অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর খবর।
অনুসন্ধানকালে আদালত সূত্র জানায়, গত ৬ জানুয়ারি আনন্দ গ্রুপ ঢাকার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এএইচএম মাহবুব আলম সরকার ঝিনাইদহ থানায় তিন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের একজনের কাছে একটি মূল্যবান কয়েন আছে; যা নাসার গবেষণা কাজে ব্যবহার হয়। একজন আমেরিকান ক্রেতা আছেন যিনি উক্ত কয়েন ক্রয় করবেন। কিন্তু সরাসরি আমেরিকানরা উক্ত কয়েন ক্রয় করতে পারেন না। তাই আপনার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রয় করা সম্ভব। কয়েনের মূল্য ১২শ’ কোটি টাকা। এরপর আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. বারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলন করা নগদ দেড় কোটি টাকা বাদীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। এ ঘটনায় প্রতারকরা নিজেরা ক্রেতা বিক্রেতা সেজে ঘটনাটি ঘটায়। তাদের দলে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী রয়েছেন।
প্রথমদিকে সদর থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. কামাল হোসেনকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআই ঝিনাইদহের এসআই তৌহিদুল ইসলামকে।
সূত্র জানায়, পিবিআই ঝিনাইদহের এসপি মাহবুবুর রহমান সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের ধরতে একটি টিম গঠন করে দেন। এসআই তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রে পাঁচ সদস্য মো. আবু তাহের জবা, মো. মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান, আক্তারুজ্জামান আক্তার ওরফে সালাম, মো. শফিকুল ইমলাম স্বপন ও মো. স্বপন ব্যাপারীকে আটক করা হয়। এ ঘটনা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়।
আদালতের একই সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি তাদের আটক করা হলেও আদালতে পাঠানো হয় ২৯ জানুয়ারি। এর আগে আটক আসামিদের ওপর চরমভাবে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় মর্মে আসামিরা আদালতকে অবহিত করেন।
ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. কামরুজ্জামান সংবিধানের ৩৩(২) অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে, কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- সেই মর্মে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি। ২ ফেব্রুয়ারি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান এক মামলার শুনানি করেন এবং তদন্তকারীর বিরুদ্ধে আসামি গ্রেফতারের চার দিন পরে আদালতে উপস্থাপনের অভিযোগ থাকায় পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা দ্বারা মামলাটি তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের এসআই তৌহিদুল ইসলাম উদ্ধার করা টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্যরা তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ক্রিমিনাল রিভিশন করেন তিনি। সেই সঙ্গে নিম্ন আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছেন বলে দাবি করেন এসআই তৌহিদ। এদিকে আদালত সূত্র জানায়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত রিভিশন মামলাটি পাঠিয়ে দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আয়েশা আক্তার সুমির কাছে। শুনানি শেষে তিনি (বিচারক) এসআই তৌহিদুল ইসলামের আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং মামলাটি নিম্ন আদালতে অর্থাৎ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঝিনাইদহ সদর আদালতে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন পিবিআই ঝিনাইদহের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহা. আব্দুর রব।
সূত্রমতে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন তদন্তকারী জেলা কারাগারে আটক আসামিদের ১০ দিনের পুলিশি রিমান্ডের আবেদন জানান।
এ বিষয়ে পিপি ইসমাইল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রিমান্ডের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট আদালত তদন্তকারীর আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামির অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারহানা তানি রেশমা জানান, এর আগে আদালতের আদেশে এ মামলায় গ্রেফতার করা দুইজন আসামিকে একদিন করে এবং সব আসামিদের একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী। তিনি আরও জানান, এ মামলার ৩নং আসামি মো. মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান বরিশালের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী। তাকে ষড়যন্ত্র করে এ প্রতারণার মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আইনজীবী ফারহানা আরও জানান, যে তিনজনকে আদালত জামিন দিয়েছেন তারা এ মুহূর্তে কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, মাগুরা সদর থানায় দায়ের করা অন্য একটি মামলায় আসামিদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি প্রস্তুত করা জব্দ তালিকায় বিদেশি কয়েন, ধাতব মুদ্রাসহ অন্যান্য আলামতের সঙ্গে নগদ দুই লাখ ৫৮ হাজার ৩৫০ টাকা উদ্ধার দেখানো হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে উদ্ধার করা আরও ১৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এসআই তৌহিদুল ইসলাম। আসামিপক্ষের এক নারীর সঙ্গে অডিও কথোপকথন সূত্র ধরে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে যে নারীর সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে তার প্রকৃত নাম জানাতে পারেনি কোনো সূত্র।
আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী বলেছেন, ওই নারীর নাম নিশি ইসলাম ওরফে জেরিন। যিনি এ মামলার আসামি মো. মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামানের স্ত্রী পরিচয় দিয়েছেন। তার সঙ্গে সেলফি তোলার অপরাধে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে পিবিআই ঝিনাইদহের কনস্টেবল মো. মুক্তার হোসেনকে।